শুভঙ্কর বসু: বেসরকারি স্কুলগুলির আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে দুই সদস্যের কমিটিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবারই স্কুলগুলিকে আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের নির্দেশের পাশাপাশি কমিটির প্রধান সদস্য হিসেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের নাম প্রস্তাব করেছিল হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কমিটির অন্য সদস্য হবেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন সভাপতি তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক গোপা দত্ত।
কমিটির কাজ কী হবে?
প্রথমত, স্কুলগুলির আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডের (সিবিএসই/আইসিএসই, স্কুলগুলি যে বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন) নির্ধারিত আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা তা খতিয়ে দেখবে এই দুই সদস্যের কমিটি। সেই অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের ফি ছাড় দেওয়া সম্ভব কিনা তাও সুপারিশ করবেন তাঁরা। ডিভিশন বেঞ্চের আরও নির্দেশ, ২৯ আগস্টের মধ্যে স্কুলগুলিকে হাই কোর্ট নির্ধারিত ফরম্যাটে জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০১৯ এবং জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২০-র আয়-ব্যয়ের তথ্য পেশ করতে হবে। কোনও ভুল ত্রুটি হলে তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংশোধন করা যাবে। এজন্য একটি ই-মেল আইডি ([email protected]) নির্ধারিত করেছে আদালত। এই ইমেল আইডি মারফত কমিটির কাছে হিসাবের খতিয়ান দিতে হবে। এই ই-মেল আইডি নিয়ন্ত্রণ করবে শুধুমাত্র হাই কোর্ট ও কমিটি।
এছাড়াও আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আয়-ব্যয়ের তথ্য পেশ করা ছাড়া স্কুলগুলি কোনওভাবেই কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না। হিসাবের তথ্য খতিয়ে দেখার সময় কমিটির যদি কোনও সরকারি আধিকারিকের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে কমিটিকে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে আদালত। কমিটি পছন্দের অডিটর কিংবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ করে হিসাব খতিয়ে দেখতে পারবে। এছাড়াও কমিটির কাছে আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের পাশাপাশি মামলায় উল্লিখিত ১১২টি স্কুলকে হলফনামা আকারে তা আদালতেও পেশ করতে হবে। রাজ্যের বাকি বেসরকারি স্কুলগুলির ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট।
কিন্তু কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে আদালতকে শেষ পর্যন্ত কমিটি করতে হল?
বেসরকারি স্কুলগুলি টিউশন ফি ছাড়াও অন্য বিভিন্ন খাতে পড়ুয়াদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা নেয়। এই মহামারীর সময় সেই বাড়তি টাকা নেওয়া বন্ধ হোক। মূলত এমনই বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রায় ১৫ হাজার পড়ুয়ার বাবা-মা। প্রাথমিকভাবে কল্যাণ ভারতী ট্রাস্ট (হেরিটেজ স্কুল), অশোকা হল স্কুল গোষ্ঠী, অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল এবং বিড়লা স্কুলকে পক্ষ করে বিনীত রুইয়া নামে এক ব্যক্তি জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেন। সেই সূত্রেই অভিযোগ আসে, লকডাউন পিরিয়ডে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে পুরো ফি নেওয়া হলেও একাধিক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। অথচ শিক্ষক, শিক্ষা কর্মী ও স্কুলের পরিকাঠামো সংক্রান্ত খরচ বজায় রাখতেই পুরো ফি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হয় স্কুলগুলির তরফে। রাজ্য সরকার অবশ্য জানায়, শিক্ষার অধিকার আইন ২০১২’ অনুযায়ী বেসরকারি স্কুলগুলি লাভজনক সংস্থা নয়। এ ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা রয়েছে। স্কুলগুলি পরিচালনার জন্য একটি ‘ট্রাস্ট’ বা ‘সোসাইটি’ গঠন প্রয়োজন। এবং স্কুলের পরিকাঠামো ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন সংক্রান্ত বিষয়গুলি ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এমনটা না করলে ওই আইনের ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী স্কুলগুলির রেজিস্ট্রেশন বাতিল হওয়ার কথা। রাজ্যের তরফে এমন বক্তব্য শোনার পরই মূলত স্কুলগুলির আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। সে কারণেই শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কমিটি গড়ল হাই কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি ৭ সেপ্টেম্বর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.