গোবিন্দ রায়: স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার (SSC Scam) আজ রায়দান কলকাতা হাই কোর্টে। শুনানি শেষে ৩৩ দিনের মাথায় রায় শোনাবে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির স্পেশাল ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায়ের উপর নির্ভর করছে প্রায় ২৫ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ। এসএসসিতে চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মী নিয়োগ, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গত ২০ মার্চ হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ মোট ৩৪৮টি মামলার এক সঙ্গে টানা শুনানি শেষে রায় দান স্থগিত রাখে।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে লক্ষ্মী টুঙ্গা, সেতাবউদ্দিন, ববিতা সরকার-সহ ৮ জন চাকরিপ্রার্থীর করা মামলায় তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। এখন আদালতের এদিনের রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন এক সময় চাকরিহারা ও পরে আদালতের নির্দেশে চাকরি ফিরে পাওয়া থেকে শুরু করে ন্যায্য চাকরি থেকে বঞ্চিত বহু প্রার্থী। এদিকে, এই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে দু’বছরের বেশি জেলে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসির প্রাক্তন সভাপতি সুবীরেশ ভট্টাচার্য-সহ শান্তিপ্রসাদ সিনহার মতো প্রাক্তন শিক্ষাকর্তারা। তবে এখনও সুবিচার পাননি বহু যোগ্য প্রার্থী। মাসের পর মাস রাস্তায় বসে হকের চাকরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বঞ্চিত প্রার্থীদের একটা বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে এদিনের রায় তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রথম চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০২১ সালে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
পরে তৃতীয় শ্রেণির কর্মী নিয়োগ, নবম-দশম এবং প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নিয়োগ ধরে প্রকাশ্যে আসে একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ। মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি, চাকরি থেকে বহিষ্কারেরও নির্দেশ দেয় আদালত। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ স্থগিত রেখে হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় আদালত। পরে অবশ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের অনুসন্ধান কমিটিও নিয়োগ দুর্নীতির সাপেক্ষে একাধিক তথ্য ও নথি পেশ করেন, যেখানে মেধা তালিকা বা চূড়ান্ত মেধা তালিকা, কোনও ক্ষেত্রে তাঁদের নাম ছিল না, তাঁদেরও নিয়োগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যাঁদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে হয়েছে।
পরে এই সমস্ত মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বিশেষ বেঞ্চ গঠিত হয় হাই কোর্টে। গত বছরের নভেম্বর মাসে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চকে ৬ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে বলেও জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। গত কয়েক মাস ধরে একটানা শুনানির পর রায় দান স্থগিত রাখে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। ৬ মাসের আগেই ঘোষণা হতে চলেছে রায়। হাই কোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিমরা জানিয়েছেন, “এই সবকটি ক্ষেত্রে ২৪ হাজার ৬৪০ টি শূন্যপদ ছিল, দেখা যায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত নিয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।” আরও জানান, “এই সব ক্ষেত্রে ছিল একাধিক অভিযোগ। যেমন,র্যাঙ্ক জাম্প করে চাকরি দেওয়া, ওএমআর শিটে শূন্য বা ১ পাওয়া সত্ত্বেও চাকরি দেওয়া, তালিকায় নাম না থাকা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছিল।”
মামলার শুনানি চলাকালীন অতিরিক্ত নিয়োগের পরিসংখ্যান আদালতে জমা দিয়ে তাঁরা জানান, ২০১৬ সালে নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগে কমিশনের তরফে ১১ হাজার ৪২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। পর্ষদ মোট ১২ হাজার ৯৬৪টি নিয়োগপত্র দেয়। অর্থাৎ, ১৫৩৯ জনের নিয়োগ বাড়তি। একই ভাবে, ওই বছর একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ ছিল ৫,৫৫৭ জনের। নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ৫,৭৫৬ জনকে। বাড়তি নিয়োগ হয়েছে ১৯৯ জনের। এসএসসিতে চতুর্থ শ্রেণির (গ্রুপ-ডি) কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩,৮৮১ জনের নিয়োগের সুপারিশ করেছিল কমিশন। পর্ষদ ৪৫৫০ জনকে নিয়োগপত্র দেয়। ৬৬৯ জনকে অতিরিক্ত নিয়োগ করা হয়। ওই বছর ২,০৬৭ জন গ্রুপ সি কর্মীর নিয়োগ সুপারিশ করেছিল কমিশন। নিয়োগপত্র পান ২,৪৮৩ জন। অর্থাৎ, বাড়তি নিয়োগ হয় ৪১৬ জনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.