গোবিন্দ রায়: একুশে জুলাই শুভেন্দু অধিকারীর উলুবেড়িয়ার সভার শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। আগামিকাল রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিজেপি জেলা অফিস সংলগ্ন মনসাতলা মাঠে করতে হবে সভা। সভার অনুমতি নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে চলছে দড়ি টানাটানি।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের এজলাসে বিজেপির আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার জানান, ১৪ জুলাই বাউড়িয়ার একটি জুটমিলের জমিতে সভার অনুমতি দেওয়া হয়। তার ঠিক পরদিন আদালতে মামলা করে পদ্মশিবির। ১৬ জুলাই পুলিশ জুটমিল কর্তৃপক্ষকে ভয় দেখায় এবং জুটমিল অনুমতি প্রত্যাহার করে। বাউড়িয়াতে জেলা বিজেপি কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় শ্মশান কমিটির জমি রয়েছে। সভার অনুমতি দিতে প্রস্তুত শ্মশান কমিটি। তবে পুলিশ আবেদনে সাড়া দেয়নি বলেই দাবি বিজেপির আইনজীবীর।
রাজ্যের আইনজীবী অনির্বাণ রায় শুনানি চলাকালীন পালটা জানান, ১৪ জুলাই অনুমতি চেয়ে পরদিনই হাই কোর্টে মামলা দায়ের করে বিজেপি। এই আচরণ থেকেই তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়। সভাস্থলের অনুমোদন পাওয়া গেলে তারপর বাকি অনুমতির প্রশ্ন আসে। যদি সভাস্থল না পাওয়া যায় তাহলে কীসের অনুমতি দেবে প্রশাসন? বৃহস্পতিবার ধর্মতলার সমাবেশে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আসবেন। প্রায় সাত হাজার গাড়ি ঝাড়গ্রাম, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে আসবে। তাঁরা সকলে হাওড়ার উপর দিয়েই আসবে। হাওড়া থেকে প্রায় ৫০০ গাড়ি আসবে। ট্রেনে চড়ে এবং পায়ে হেঁটে মানুষ আসবেন। তিনটি শিফটে পুলিশকর্মীরা কাজ করবেন। প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত মানুষ ফিরবেন।
২০০০ মানুষকে জায়গা দেওয়ার মতো জায়গা বিজেপির আছে? কারা কারা উপস্থিত থাকবেন সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। জায়গা পেলে ২২ জুলাই সভা করতেই পারে বিজেপি। একই দিনে সভা হলে দু’টি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কলকাতায় ৩৭০০ পুলিশকর্মী নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকবেন। বাকি জেলাতেও প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। হাওড়ার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কারণ তিন-চারটি জেলার মানুষ হাওড়া হয়ে কলকাতায় আসবেন।
সবদিক খতিয়ে দেখে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য বিজেপির আইনজীবীর উদ্দেশে জানান, ব্যক্তিগত জমিতে কেউ যদি সভা করার অনুমতি না দেন তাহলে আদালত কীভাবে তাঁর সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে? যদি ২১ জুলাই সভা করতে হয় তাহলে রাত ৮টার আগে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। এই ধরনের মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট করা আদালতের কাজ নয়। যদি আপনাদের কাছে জমিই না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে আপনাদের অনুমতি দেবে? বৃহস্পতিবার কারও জন্মবার্ষিকী নয় বা বিশেষ দিন নয়। অন্য দিন করুন। অসুবিধা কোথায়? শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে সভার অনুমতি দিয়েছিলাম। কারণ, সেটা নির্দিষ্ট দিনেই করতে হত। যেখানে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন থাকছে সেখানে অন্য দিন সভা করলে অসুবিধা কোথায়? তবে এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য উত্তর পারেনি মামলাকারী।
এরপর বিচারপতি শর্তসাপেক্ষে বৃহস্পতিবার বিজেপির সভায় অনুমতি দেন। রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে ছ’টার পর থেকে মানুষ এবং গাড়ি সভাস্থলের উদ্দেশ্য যেতে পারবে। হাওড়ার স্থানীয় মানুষ ছাড়া বাইরের লোক যেন সভায় না আসেন তা নিশ্চিত করবে বিজেপি। বিজেপি জেলা অফিস সংলগ্ন মনসাতলা মাঠে করতে হবে সভা। বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টার মধ্যে স্থানীয় থানাকে সভাস্থল সম্পর্কে অবগত করতে হবে। পুলিশ সভাস্থল পরিদর্শন করবে। দেখবে যে ২০০০ লোকের জন্য জায়গাটি পর্যাপ্ত কিনা।
যদি দেখা যায় ২০০০ জন মানুষের জন্য সভাস্থল পর্যাপ্ত নয়, তাহলে কত মানুষ নিয়ে সভা করবেন সে বিষয়ে পুলিশকে অবগত করবে বিজেপি। জাতীয় সড়ক যাতে অবরুদ্ধ না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। ওই সভাস্থল ২০টি লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে। সভাস্থলের জন্য ২০টি আদৌ পর্যাপ্ত কিনা, খতিয়ে দেখবেন মহকুমাশাসক। প্রয়োজনে তিনি লাউড স্পিকারের সংখ্যা কমাতে পারেন। কিছুদিন আগেই যেহেতু ওই এলাকায় অশান্তি হয়েছিল তাই বক্তারা যেন কোন প্ররোচনামূলক বক্তব্য না রাখেন এবং প্ররোচনামূলক ভিডিও না দেখান, যার দ্বারা মানুষ উত্তেজিত হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিজেপিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.