স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন আদৌ বৈধ নয় বলে ফের জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিধি ভেঙে প্রাইভেট টিউশনে যুক্ত স্কুলশিক্ষকদের বিরুদ্ধে পর্ষদ ও সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। না হলে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতই পদক্ষেপ করবে বলে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ। প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায় এদিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ওই নির্দেশ দেয়। প্রসঙ্গত, সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন অবৈধ বলে আগেও নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।
শুক্রবার কার্যত পুরনো সেই নির্দেশের কথাই আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিল আদালত। এদিন প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আইনজীবী একরামুল বারি আদালতে জানান, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে ২০১৮ সালে জারি করা রুল অনুযায়ী, পর্ষদের আওতাধীন স্কুলে কর্মরত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের প্রাইভেট টিউশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু স্কুলের একশ্রেণির শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে প্রাইভেট টিউশন নিতে বাধ্য করছেন। এমনকী অনেকেই বিভিন্ন প্রাইভেট ইনস্টিটিউটেও পড়াচ্ছেন। এটা আইনত অপরাধ।’’ পর্ষদের তরফে আইনজীবী বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। আদালতের এদিনের নির্দেশ প্রসঙ্গে ‘যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘‘স্কুল শিক্ষকদের আচরণবিধিতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা রয়েছে, গৃহশিক্ষকতা করা যাবে না। প্রধান শিক্ষক হিসাবেও আমি সবসময় মনে করি দায়বদ্ধতাটা ক্লাসে পড়ানোর প্রতিই থাকা উচিত। তাই স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা বন্ধে আমি পূর্ণ সহমত পোষণ করি। হাই কোর্টের নির্দেশটা সব শিক্ষকের কাছে সতর্কবার্তা হওয়া উচিত। এটা একটা জেগে ওঠার ডাক।’’ বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্যও একমত। তিনি বলেন, ‘‘নৈতিক দিক থেকে সত্যিই স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করা উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। একজন স্কুলশিক্ষকের প্রথম প্রচেষ্টা হবে, তিনি যে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, সেখানকার বাচ্চাদের তৈরি করা। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতাটাকে নৈতিকভাবে সমর্থন করি না। অন্তত যতদিন তিনি চাকরিতে রয়েছেন। তবে, আমার স্কুলের মেয়েরা কোনও স্কুলের শিক্ষক নন এমন কারও কাছে পড়তে পারে, সেটা আবার আমি শিক্ষিকা হিসাবে বলতে পারি না।’’
মামলাকারী প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক দীপঙ্কর দাস জানান, ‘‘আমি সমস্ত গৃহশিক্ষক ও গৃহশিক্ষিকাদের উদ্দেশে বলব, সরকারি নির্দেশটা আমাদের পক্ষেই ছিল, হাই কোর্টের নির্দেশও আমাদের পক্ষে গেল। এখন থেকে প্রত্যেকের নিজের নিজের এলাকায় টিউশনরত স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.