অর্ণব আইচ: চোর পালালেও অনেক সময় বুদ্ধি বাড়ে না! হয়তো সেই কারণেই চোখের সামনে বাগরি মার্কেটে এত বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটার পরও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কেনার দিকে নজর নেই শহরবাসীর। অগ্নিসুরক্ষা সংক্রান্ত জিনিস যে দোকানগুলিতে বিক্রি হয়, সেখানে যাচ্ছেন মানুষ৷ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের দামও জিজ্ঞাসা করছেন দোকানদারকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কিনছেন আর কতজন?
“সুরক্ষার জন্য মানুষ যে খরচই করতে চান না। বিষয়টি অনেকটা যেন বিমার মতো। তিন বছরের মধ্যে যদি আগুন লাগার কারণে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়, তখন ক্রেতা মনে করেন, ভাগ্যিস যন্ত্রটি আগেভাগে কিনে রেখেছিলাম। কিন্তু আগুন না লাগলে অনেকেই মনে করেন অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কিনে রাখা অকারণ খরচ ছাড়া অন্য কিছু নয়।” আক্ষেপ করছিলেন এক ব্যবসায়ী৷ স্ট্র্যান্ড রোড থেকে ক্যানিং স্ট্রিট ধরে এগোতেই তাঁর দোকান। বহু বছর ধরে বিক্রি করে আসছেন অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র-সহ সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। বড়বাজার, জোড়াসাঁকো-সহ শহরের বিভিন্ন অংশে রয়েছে অগ্নিসুরক্ষা সংক্রান্ত যন্ত্রের দোকান।
[রাজ্যকে অশান্ত করার চক্রান্ত চলছে, বনধের বিরোধিতায় পথে নামবে তৃণমূল]
বাগরি মার্কেট পুড়ে যাওয়ার পরও প্রথমে দোকানদাররা মনে করেছিলেন, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের বিক্রি বাড়বে। কারণ, চোর পালালেই যে বুদ্ধি বাড়ে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বুদ্ধি বিশেষ বাড়েনি। ক্রেতারা এসে জিজ্ঞাসা করেছেন অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের দাম। ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে যন্ত্রের দাম। তিন বছর এই যন্ত্রের মেয়াদ। তার পর পাল্টাতে হবে সিলিন্ডারের ভিতরে থাকা অগ্নিনির্বাপণ পাউডার। দোকানদারদের মতে, এমনও হয় যে, অনেক সময়ই বাধ্য হয়ে ক্রেতারা হয়তো কিনে নিয়ে যান অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। কিন্তু তিন বছর পর ভিতরের পাউডার আর তাঁরা পাল্টান না। তাই বছরের পর বছর একইভাবে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যায় ওই যন্ত্র। বাগরি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মতে, এইভাবে পড়ে থেকে থেকেই নষ্ট হয়েছিল মার্কেটের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলি। বাগরি ও কোঠারিরাও কোনওদিন সুরক্ষার বিষয়ে ভাবেননি। তার ফল শেষ পর্যন্ত পেতে হল ব্যবসায়ীদের।
[রেশনে ভিটামিনযুক্ত চাল দেবে কেন্দ্র, চিঠি রাজ্যকে]
তবুও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও অগ্নিসুরক্ষা কেন্দ্রিক অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিক্রি হয়। এক দোকানদার জানান, এখন তাঁদের জিনিসগুলির মূল ক্রেতা মূলত কর্পোরেট সংস্থা, নতুন বাণিজ্যিক বাড়ি বা মার্কেট, বহুতল আবাসনগুলি। তা-ও অনেকটা বাধ্য হয়ে। দোকানদারের দাবি, সাধারণত অডিট হওয়ার সময় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলি খতিয়ে দেখা হয়। তাই তিন বছরের মেয়াদ পার হওয়ার আগেই অগ্নিনর্বাপণ যন্ত্রগুলি নিয়ে দোকানে চলে আসে মার্কেট, আবাসন বা কর্পোরেট সংস্থাগুলি। তাদের অর্ডারমতোই যন্ত্রে পাউডার ‘রিফিল’ করা হয়। কিন্তু বহু পুরনো বাণিজ্যিক বাড়ির ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হয় না। দোকানদারদের মতে, প্রত্যেকটি দোকান ও বাড়ির রান্নাঘরে আলাদা করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা উচিত। মেয়াদ ফুরোলে তা পাল্টানোরও প্রয়োজন। হাজার টাকার যন্ত্রই বাঁচাতে পারে লাখ টাকার সম্পত্তি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.