কৃষ্ণকুমার দাস: দুর্ঘটনা রুখতে মহানগরের বিপজ্জনক বাড়ি এবার ভেঙে দেবে কলকাতা পুরসভাই (Kolkata Municipal Corporation)। ভাঙার আগেই বাড়ির সমস্ত ভাড়াটিয়াদের বসবাসের অধিকার সংক্রান্ত শংসাপত্রও দেবে পুরসভা। চলতি আইনে বাধা থাকায় এতদিন পুরসভা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাড়ি ভাঙতে পারত না। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় কলকাতা পুরসভার আইন সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দিয়ে শহরকে নিরাপদ করার অস্ত্র হাতে পেয়ে গেলেন পুর প্রশাসকরা। বিল পাস হওয়ার পর পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানিয়েছেন, ‘‘অতি বিপজ্জনক বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও আইনি বাধা থাকায় পুরসভা সেগুলিতে হাত দিতে পারছিল না। কিন্তু এবার বাসিন্দাদের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি মহানগরকে বিপন্মুক্ত করতে পারব।’’
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী নেওয়া হয়েছে। এবার কলকাতায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সঙ্গে সঙ্গেই তার মিউটেশন (Mutation) হয়ে যাবে। এতদিন আলাদা করে পুরসভায় গিয়ে আবেদন জানাতে হত, তাতে হয়রানির শিকার হতেন বাড়ির মালিকরা। এদিন বিধানসভায় আইন সংশোধন করে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের সময়েই মিউটেশনের পরিষেবা চালুর কথা ঘোষণা করেন পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বলেন, ‘‘অনেকেই পুরকর ফাঁকি দিতে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রির পর মিউটেশন করায় না। ফেলে রাখে। এই বিলের ফলে জমি রেজিস্ট্রি করলে সরাসরি তার মিউটেশন হয়ে যাবে। এটা একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আসবে। নাগরিকদের হয়রানি কমবে।’’ একইসঙ্গে ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে (Online) বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনের সিদ্ধান্তও জানান পুরমন্ত্রী।
কলকাতা পুরসভা (KMC) পরিচালনার সংস্কার করতে গিয়ে প্রস্তাবিত বিলে ২৭টি সংশোধনী ছিল। তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য পুরকর নিয়ে ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট। বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এতদিন কোনও একটি এলাকায় গরিব-বড়লোক সবার ক্ষেত্রে একইরকম কর ধার্য হত। অর্থাৎ ‘এ’ ক্যাটেগরি এলাকায় বহুতল বাসিন্দাদের যে হারে পুরকর দিতে হত, সেই একই রেট ধার্য হত বসতিবাসীর উপরও। কিন্তু এবার বহুতল এবং বসতি পাশাপাশি থাকলেও পুর কমিশনার দু’টি ক্ষেত্রে পৃথক কর ধার্য করতে পারবে।’’ পরে তিনি ব্যাখ্যা করে দেন, ‘‘ইউনিট এরিয়ার নিয়ম মানতে গিয়ে বহু শহর গরিবশূন্য হয়ে গিয়েছে। আমরা তা চাই না বলেই এই আইন এনেছি। পার্ক স্ট্রিট, নিউ আলিপুরের মতো এলাকায় গরিব-বড়লোক সবাই থাকবে। দু’পক্ষের জন্য আলাদা রেটে কর ধার্য হবে। গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্তকে সুবিধা দিতেই কর আইনে এই সংশোধনী আনা হয়েছে।’’
এদিন বিলের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের অম্বিকা রায়, অরূপকুমার দাস, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, অশোক লাহিড়ীরা বিলের বিরোধিতা করেন। শাসকদলের অতীন ঘোষ, দেবব্রত মজুমদাররা বিলের পক্ষে বলেন। বিশেষ করে বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে এই বিলের দৌলতে যে একটা স্থায়ী সমাধানে পৌঁছনো গেল তা মনে করিয়ে দেন। বিল্ডিং দপ্তর সূত্রের খবর, কলকাতা পুর এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে শহরে। বেশিরভাগই বড়বাজার, পোস্তা, কলেজ স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, মানিকতলা, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট-সহ উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। বিভিন্ন সময়ে তা ভেঙে হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। পুর আইন বলে কেবল ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ নোটিস টাঙিয়েছে পুর প্রশাসন। আর কিছু করতে পারেনি। বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা বা সারানোর মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল শরিকি বিবাদ এবং বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের আইনি লড়াই। মামলার কারণেও অনেক সময়ে পিছু হঠতে হয়েছে পুরসভাকে। বিলগুলি পাস হওয়ার পর রাজ্যপালের সম্মতি পেলেই আইন দ্রুত কার্যকর হবে বলেও ফিরহাদ জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.