Advertisement
Advertisement
child trafficking

৯ মাস অন্তঃসত্ত্বা সেজে চক্রের ‘সেফ হাউজে’ ক্রেতা মা অভিনয়! শিশু পাচার কাণ্ডে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

অন্তঃসত্ত্বার অভিনয়ের জন্য প্রশিক্ষনও দেওয়া হত।

Buyer mother had to pretend to be pregnant for 9 month, New information in child trafficking | Sangbad Pratidin
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:August 2, 2023 10:18 am
  • Updated:August 2, 2023 10:20 am  

অর্ণব আইচ: গর্ভে আসেনি সন্তান। তবু টানা ন’মাস অন্তঃসত্ত্বা সেজে থাকতে হত পাচার হওয়া শিশুর ক্রেতা ‘মা’কে। কখনও বা পেটে বাঁধতে হত বালিশ। আবার কখনও ‘বেবি বাম্প’ জোগাড় করে দিত ওই চক্রের সদস‌্যরাই। কলকাতায় শিশু পাচার চক্রের তদন্তে এই চাঞ্চল‌্যকর তথ‌্য উঠে এসেছে পুলিশ আধিকারিকদের হাতে। আনন্দপুর থানার পুলিশের হাতে ধৃত শিশু পাচার চক্রের চার সদস‌্য শহরের কোনও না কোনও ‘ইন ভাইট্রো ফার্টিলাইজেশন’ বা আইভিএফ সেন্টারের কর্মী। ধৃতদের প্রাথমিকভাবে জেরা করেই পুলিশ আধিকারিকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ব‌্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা আইভিএফ বা ফার্টিলিটি সেন্টারের আড়ালেই কলকাতায় রমরমিয়ে চলছে শিশু পাচার চক্র। আইভিএফ কর্মীরা রীতিমতো ছক কষে পাচার চক্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পেয়েছেন পুলিশ আধিকারিকরা। এই চক্রের আরও সদস‌্যদের হদিশ পেতে এবার শহরের কয়েকটি আইভিএফের উপর নজর পুলিশের। আবার সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশাল চাহিদা থাকায় সেই সুযোগও নেয় এই চক্র।

পুলিশ জানিয়েছে, নিঃসন্তান দম্পতিরা টেস্ট টিউব বেবির জন‌্যই মূলত আসেন আইভিএফগুলিতে। শিশু পাচারের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের টার্গেট থাকেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীরা। তাঁদের বলা হয়, চিকিৎসা না করিয়েও সহজে সন্তান পাওয়ার উপায় রয়েছে। চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার প‌্যাকেজেই পাওয়া যাবে সন্তান। কোনও দম্পতি রাজি হয়ে গেলে চক্রটি প্রথমে যোগাযোগ করে এমন মহিলার সঙ্গে, যে টাকার বিনিময়ে শিশু বিক্রিতে রাজি। তাকে আগাম টাকাও দেওয়া হয়। এই  ক্ষেত্রে স্বামী সঙ্গে না থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত নোনাডাঙার রূপালি মণ্ডল অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় তার সন্তান বিক্রি করতে রাজি হয়। একই সঙ্গে ক্রেতা দম্পতির কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে তাঁদের কলকাতায় আসতে বলা হয়। শহরে তাঁদের জন‌্য ১১ মাসের চুক্তিতে বাড়ি ভাড়া নেয় চক্রটি। চিকিৎসার অছিলায় তাঁরা কলকাতায় থাকেন। ক্রেতা মহিলাটি যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন, তা সবাইকে বোঝানোর জন‌্যই এই চক্রটির পক্ষ থেকেই জোগাড় করে দেওয়া হয় ‘বেবি বাম্প’। আবার কখনও বা পেটে বালিশ বেঁধে রাখতেও বলা হয়। টানা ন’মাস ধরে ওই মহিলাকে অন্তঃসত্ত্বা সেজে থাকতে বলা হয়। আনন্দপুরে শিশু পাচারের ঘটনার ক্ষেত্রে পর্ণশ্রী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ক্রেতা মহিলাকেও অন্তঃসত্ত্বা সেজে থাকতে হত। তাঁর বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির সবাই জানতেন যে, ওই মহিলা অন্তঃসত্ত্বা। তাঁদের কেউ দেখা করতে এলেও কীভাবে ওই ক্রেতা মহিলাকে অন্তঃসত্ত্বা সেজে থাকতে হবে, সেই ব‌্যাপারে রীতিমতো প্রশিক্ষণও দেওয়া হত।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের জটিলতা কাটাতে নয়া সিদ্ধান্ত, মুখ বন্ধ খামে প্রধানদের নাম পাঠাবে তৃণমূল]

বিক্রেতা মহিলা শিশু জন্ম দেওয়ার দুই বা তিন সপ্তাহ পর তার কাছ থেকে শিশু কিনে নিত এক দালাল। শিশু হাতবদল হতে হতে শেষে যেত এমন এক দালালের হাতে, যার সঙ্গে ক্রেতার সরাসরি যোগ রয়েছে। আবার এক দালাল অন‌্য দালালকে চিনত না। এভাবেই পাচারকারীরা চক্র চালাত। এতে চক্রের হাতে থাকত সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। আইভিএফের বাকি কয়েকজন কর্মীও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলেই অভিযোগ। এভাবে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর-সহ বেশ কয়েকটি জেলার দম্পতিকে এভাবে কলকাতায় ‘সেফ হাউস’-এ রেখে দিয়ে শিশু পাচারের ছক কষা হয় বলে অভিযোগ।

পুলিশের কাছে খবর, বেহালা অঞ্চলের একটি আইভিএসে এসেছিলেন  মেদিনীপুরের সেই দম্পতি, যাঁরা গত ১৫ বছর ধরে নিঃসন্তান। সেখানেই তাঁদের পরিচয় হয় ওই আইভিএফের কর্মী বেহালার বামাচরণ রায় রোডের বাসিন্দা লাল্টি দে-র সঙ্গে। ওই মহিলাই দম্পতিকে শিশু পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেয়। দরাদরিতে দম্পতি চার লাখ টাকায় শিশু কিনতে রাজি হন। লাল্টি ও চক্রের অন‌্যদের কথামতোই কল‌্যাণী গুহ ও তাঁর স্বামী পর্ণশ্রীর ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। বেহালার ওই আইভিএফের কয়েকজন কর্মীকে জেরা করা হবে। এর আগে কতজন দম্পতিকে শিশু বিক্রি করা হয়েছে, ধৃতদের সেই ব‌্যাপারে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement