ফাইল ছবি
নব্যেন্দু হাজরা: চৈত্র সেল, পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া, এমনকী ইদেও পসরা সাজাতে পারেনি শাড়ি, জুতো, জামাকাপড়ের দোকানগুলি। পুজোর আর মাস দেড়েকও বাকি নেই। কিন্তু সেই অনুযায়ী বিক্রি কোথায়! করোনা আবহে কেনাকাটায় মন নেই বাঙালির। তাই নতুন পণ্য তুনছেন না দোকানদাররাও। গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা, নিউ মার্কেট থেকে শ্যামবাজার। কেনাকাটার ভিড় তেমন এখনও নেই। বিশেষত ছোট দোকান বা হকারদের সামনে নেই ক্রেতার আনাগোনা। দিনভর দোকান খোলা রেখেও বিক্রি তেমন না হওয়ায় মাথায় হাত দোকানদারদের। তাঁদের কথায়, নতুন কোনও পণ্য কেউ তুলছেন না। দু’বছর আগের স্টক ক্লিয়ার করাটাই এখনও লক্ষ্য তাঁদের।
গতবছরও করোনা (Corona Virus) আবহে পুজোর বাজার ছিল মন্দা। এবারও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় বাজার ভাল হওয়ার বিশেষ কোনও আশা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ দোকানদারেরই এক কথা, মানুষের হাতে টাকা নেই। যারা সরকারি চাকরিজীবী, তাঁরাই এই সময়টায় একটু কেনাকাটা করছেন। কিন্তু তাও অনলাইনে। আমাজন বা ফ্লিপকার্টের মতো সংস্থায় কাজ করা কর্মীরা জানাচ্ছেন, পুজো আসায় অর্ডার এখন একটু বাড়ছে। তবে শাড়ি বা পাঞ্জাবির বুটিক থেকে ছোট দোকান, সর্বত্রই মাছি তাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
করোনা আবহে গত বছরও ছিল পুজোর (Durgapuja 2021) বাজার মন্দা। লকডাউনে বহু মানুষের চাকরিহারা হওয়া, বহু মানুষের চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা, মাইনে কমে যাওয়া, সবকিছু মিলিয়েই মানুষ পুজোর বাজার থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে ছিলেন। একবছর পরও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। তাই জমেনি বাজার। কলকাতা বা মফস্বলের জামাকাপড়ের মার্কেট তো বটেই, এমনকী বড়বাজারের হোলসেলাররাও জানাচ্ছেন, বাজারে কোনও ডিমান্ড নেই নতুন পোশাকের। দু’বছর আগে যে দোকানদার পুজোর তিন মাস আগে অন্তত হাজার পিস নতুন শার্ট তুলতেন, তিনিই এবার একটাও শার্ট তোলেননি। তবে সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে বাজার একটু ভাল হতে পারে বলে মনে করছেন হোল সেলাররা।
শুধু কলকাতা বলে নয়, সোদপুর, কাঁচরাপাড়া, শ্রীরামপুর, বারাসতের মতো মফস্বলেও ছোট দোকানে কেনাকাটার লোক নেই। পুজো বেশিরভাগ জায়গায় হবে ছোট করে। তবে মানুষকে ভাবাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের অশনি সংকেত। সকলেরই আশঙ্কা, অক্টোবরে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লে বঙ্গে পুজো না আবার মাটি হয়! আর এই আশঙ্কাতেই লোকে পুজো শপিংয়ের দিকে বিশেষ ঝুঁকছেন না। “প্রতিবার পুজোর আগে একটা ট্রেন্ড থাকে। নতুন স্টাইলের জামা, সিরিয়ালে দেখা শাড়ি বা অন্য ড্রেস বেরোয়। কারণ বাজারে তার চাহিদা থাকে। কিন্তু এবার তেমন কিছুই নেই।” বলছিলেন গড়িয়াহাটের এক বস্ত্র বিপণির দোকানদার।
শ্যামবাজারের হকারদেরও একই অবস্থা। অনেকেই লকডাউনে (Lockdown)পেশা বদলেছেন। জামাকাপড় ছেড়ে তাঁরা কেউ সবজির দোকান দিয়েছেন, কেউ বা মাছের। ফলে সেই দোকান এখনও বন্ধ। কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুশীল পোদ্দার বলেন, “মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের হাতে টাকা কোথায়? লোকের চাকরি-বাকরি নেই। পুজোর বাজার জমবে কী করে? তাই বাজারেও চাহিদা নেই।” কলকাতা শাড়ি অ্যাসোসিয়েশনের কনভেনর নির্মল সরাফ পানঘাট বলেন, “নতুন ধরনের শাড়ি এবার সেভাবে আসেনি। বাজারে চাহিদাও নেই। বড় দোকানগুলো তাও কিছু শাড়ি তুলেছে। ছোট দোকান নতুন কোনও শাড়ির অর্ডার হোল সেল মার্কেটে সেভাবে দেয়নি। সেপ্টেম্বর মাস পড়লে বোঝা যাবে মানুষের কেনাকাটা এবার পুজোয় কেমন হবে!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.