ফাইল ছবি।
কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: অপরাধ, মাঝপথে দাঁড় করিয়ে এক দৃষ্টিহীনকে বাসে তুলেছিলেন। মানবিক এই কাজ অপরাধ হিসেবে ঠেকেছে কর্তব্যরত পুলিশের কাছে। রেয়াত করা হয়নি চালক ও কন্ডাক্টর কাউকেই। প্রথমে হাজার, তারপর যাত্রীরা একযোগে প্রতিবাদ করায় ১৫০ টাকার জরিমানা আদায় করেন ওই পুলিশকর্মী। পুলিশের এই অমানবিক মুখ স্বাভাবিকভাবেই সমালোচিত হয়েছে। কমিশনারেটের ফেসবুক পেজে ঘটনার কথা বিস্তারিত জানাবেন বলেছেন দৃষ্টিহীন ওই ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটেছে বিধাননগর কমিশনারেটের এয়ারপোর্ট এলাকায়।
তিন বছর বয়সে বসন্ত হয়েছিল রাজেশ ঠাকুর নামে একটি শিশুর। ভুল চিকিৎসার ফলে তার দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। তিনি এখন বছর পঁয়ত্রিশের যুবক। দমদম বিমানবন্দরে কর্মরত। তাঁকে ঘিরেই বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে। ঠিক কী হয়েছিল এদিন? রাজেশবাবুর কথায়, অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল তখন। সন্ধে সাড়ে ছ’টা বাজে ঘড়িতে। প্রতিদিনই অফিসের কোনও না কোনও সহকর্মী তাঁকে বাসে তুলতে আসেন। সেদিনও এসেছিলেন একজন। বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের কাছে হাত দেখানোর পরও কোনও বাস থামছিল না। তাঁর হাতে ছিল দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্যবহৃত স্টিক। চোখে কালো চশমা। তা দেখেও কোনও বাস দাঁড়াচ্ছিল না। অগত্যা তিনি যশোর রোড ধরে একটু পিছন দিকে হাঁটতে থাকেন। তাঁর যাওয়ার ছিল মহিষবাথানে। একটি বালি-করুণাময়ী রুটের বাস আসছিল। সহকর্মী ও তিনি দু’জনেই হাত দেখান এবং সৌভাগ্যক্রমে বাসটি মাঝপথে দাঁড়িয়ে যায়। তিনি বাসে ওঠেন। বাস চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এক পুলিশকর্মী বাসটি দাঁড় করান। এবং মাঝরাস্তায় বাস দাঁড় করানোর অপরাধে জরিমানা দিতে বলেন মোটা টাকার।
এই ঘটনায় গর্জে ওঠেন বাসে থাকা অন্যান্য যাত্রীরাও। রাজেশ নিজে ও যাত্রীদের কয়েকজন বাস থেকে নেমে পুলিশের সঙ্গে বচসা জুড়ে দেন। তবে জেদে অটল ছিলেন পুলিশকর্মী। তিনি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত কম টাকার জরিমানা আদায় করেই ছাড়েন বলে রাজেশের অভিযোগ। এরপর কন্ডাক্টর রাজেশকে বলেন, আপনাকে তুলতে গিয়ে কেস খেলাম দাদা। এই জন্য ভাল কাজ করতে নেই। ঘটনায় ভীষণরকম আঘাত পেয়েছেন রাজেশ। তাঁর বক্তব্য, “মানুষের জন্য আইন না আইনের জন্য মানুষ? তা এই বয়সে এসেও বুঝতে পারলাম না।” এরপর কাকভেজা রাজেশ বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেছেন, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর উপর কোনও রাগ নেই। কিন্তু একজন দৃষ্টিহীনের প্রতি পুলিশ একটু সংবেদনশীল হতে পারতেন। তিনি চান ঘটনার কথা সবাই জানুন। তাই পুলিশের ফেসবুক পেজে লিখে কমিশনারেটের বড়কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.