নব্যেন্দু হাজরা: লকডাউনের (Lockdown) পর আনলকেও থমকে পরিবহণ। বেতন অমিল, আর্থিক অনটন। যুঝতে না পেরে এবার কলকাতার বুকে আত্মঘাতী হলেন এক বাসচালক। পুলিশ সূত্রে খবর, দমদম পার্ক এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বড়াল নামে এক বাসচালক আত্মহত্যা করেছেন রবিবার। তিনি ২২১ নং রুটের বাস চালাতেন বলে জানা গিয়েছে। ঘনিষ্ঠদের দাবি, মানসিক টানাপোড়েন থেকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বজিৎ। তদন্ত শুরু করেছে লেকটাউন থানার পুলিশ।
২২১ নং রুটের বাসচালক বিশ্বজিৎ বড়াল দমদম পার্কের বাড়িতে একাই থাকতেন। পরিবারে কেউ ছিল না। লকডাউনের জেরে টানা ৭০ দিন ধরে বন্ধ ছিল বাস চলাচল। কাজ না থাকায় বেতনও পাচ্ছিলেন না তিনি। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, উপার্জন না থাকায় বাড়িভাড়া থেকে বিদ্যুতের বিল – সবই বকেয়া পড়েছিল। এমনকী খাবার কেনার মতো টাকাও ছিল না তাঁর। তারউপর বাজারে বেশ ধারদেনাও ছিল। কীভাবে সব মেটাবেন, কীভাবেই বা দৈনন্দিন জীবন চালাবেন, তা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। ঘনিষ্ঠদের কাছে প্রায়ই চিন্তার কথা প্রকাশ করতেন।
ওয়েস্টবেঙ্গল বাস, মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসু জানিয়েছেন, ”বিশ্বজিৎ কমবয়েসি ছেলে। বেতন পাচ্ছিল না। ধারদেনা হয়ে গিয়েছিল, ডিপ্রেশনেও ভুগছিল। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।” জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে নিজের ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বিশ্বজিৎ। তাঁর দেহ পরে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় লেকটাউন থানার পুলিশ। শুরু হয়েছে তদন্ত।
লকডাউন উঠে আনলক ২ (Unlock 2) পর্যায় শুরু হলেও, রাজ্যে গণ পরিবহণ মসৃণ হওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাস। সীমিত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত, ভাড়া বাড়াতে অনড় বাসমালিক সংগঠনগুলি। রাজ্য সরকার ভরতুকি দিয়ে বাস চালানোর প্রস্তাব দিলেও, তাতে নারাজ মালিকরা। বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজ্য সরকার এবং বাস মালিক সংগঠনের মধ্যে এই চাপানউতোরের জেরে রাস্তায় বাস ঠিকমতো চলছিল না। ফলে বিশ্বজিৎদের মতো চালকরা কাজও করতে পারছিলেন না। মিলছিল না বেতন। সবমিলিয়ে, তরুণ বাসচালকের অবসাদ বাড়ছিল। ভবিষ্যতের দিশা পাচ্ছিলেন না। এর জেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠদের দাবি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এধরনের ঘটনা যেন সমস্যার আরও প্রকট রূপই তুলে ধরল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.