অর্ণব আইচ: বাড়িতে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন স্ত্রী। শহরের তিনটি হাসপাতালে ঘুরেও হয়নি সুরাহা। ওই তিন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিএসএফ জওয়ান অনুরোধ করেছিলেন তাঁর প্রসূতি স্ত্রীকে ভরতি নেওয়ার জন্য। কিন্তু তিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জওয়ানকে কার্যত ফিরিয়ে দেয়। এর মধ্যে কোনওটি কোভিড হাসপাতাল। আবার কোনওটিতে চিকিৎসক নেই। শেষ পর্যন্ত জওয়ানের পরিবারের পাশে এগিয়ে এল কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কোভিড হাসপাতালই। সল্টলেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য বিএসএফের নিজস্ব কম্পোজিট হাসপাতালের একাংশে তৈরি হয়েছে এই কোভিড হাসপাতালটি। রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালের অন্য অংশে অপারেশন থিয়েটারে পিপিই পরে ‘সিজার’ করলেন এই কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। জওয়ানের স্ত্রী জন্ম দিয়েছেন এক পুত্রসন্তানের।
বিএসএফ সূত্র জানিয়েছে, ওই জওয়ানের স্ত্রীকে ভরতি করার কথা ছিল বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে জওয়ান ওই হাসপাতালটিতে যান। বিএসএফের ডিআইজি (মেডিক্যাল) ডা. তারকেশ্বর প্রসাদ জানান, প্রথম বেসরকারি হাসপাতালটি জানায়, কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ তাঁদের হাসপাতালে এখন আসছেন না। তাই ‘সিজার’ বা অপারেশন সম্ভব নয়। দ্বিতীয় হাসপাতালটি কোভিড হাসপাতাল। সেখানে রয়েছেন করোনা রোগীরা। তাই কোনও প্রসূতিকে ভরতি নেওয়া হবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়। সমস্যায় পড়েন জওয়ান। বাইপাসের কাছেই তৃতীয় বেসরকারি হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় বেড খালি নেই। ততক্ষণ ওই প্রসূতি প্রসব যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করেছেন।
বিষয়টি জওয়ান বিএসএফের কম্পোজিট হাসপাতালের কর্তাদের জানান। তাঁরা নিজেরাও কিছুটা ধন্দে পড়ে যান। কারণ, বিএসএফের এই কম্পোজিট হাসপাতালের একটি অংশেই তৈরি হয়েছে কোভিড হাসপাতাল। মূলত করোনা আক্রান্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের জন্য তৈরি এই হাসপাতালে রয়েছে ৩০টি বেড। এখানে এখন নয়জন করোনা আক্রান্ত বিএসএফ জওয়ানের চিকিৎসা চলছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই কোভিড হাসপাতালটিকে পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজার দিয়ে সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার। কোভিড হাসপাতালে কোনও প্রসূতির ভরতির ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। জওয়ানের স্ত্রীর শরীরের অবস্থা দেখে এই ঝুঁকি নেন বিএসএফ কম্পোজিট হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ডা. তারকেশ্বর প্রসাদ জানান, জওয়ানের স্ত্রীকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর করোনা নেগেটিভ। হাসপাতালের অন্য অংশে থাকা অপারেশন থিয়েটার ভাল করে স্যানিটাইজ করা হয়। কারণ, এই কোভিড হাসপাতালে এখন সব রকমের অস্ত্রোপচার বন্ধ। অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত প্রত্যেক চিকিৎসক ও নার্স পরে নেন পিপিই। যথেষ্ট সাবধানতার সঙ্গে ওই প্রসূতির ‘সিজার’ হয়। জন্ম নেয় পুত্রসন্তান। এরপর মা ও শিশুকে সুস্থ রাখাটাও বড় চ্যালেঞ্জ চিকিৎসকদের কাছে। হাসপাতালের একটি খালি আবাসন স্যানিটাইজ করে সেখানেই তৈরি করা হয়েছে প্রসূতি বিভাগ। জওয়ানের স্ত্রী ও ছেলে সুস্থ আছেন। ইতিমধ্যেই আরও এক জওয়ানের প্রসূতি স্ত্রী হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন। তাঁরও ‘সিজার’ হবে বলে জানিয়েছেন বিএসএফের চিকিৎসকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.