ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কলকাতার মঞ্চে জাতীয় কর্মসূচি। দেশের তাবড় হেভিওয়েট নেতাদের উপস্থিতি। ভোটের আগে মোদি-বিরোধী মঞ্চের একপ্রকার ওয়ার্ম আপ। সে অর্থে তৃণমূলের ডাকে দেশের প্রায় সমস্ত বিরোধী দলকে এক করে এমন কর্মসূচি এই প্রথম। লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০১৯-এর অন্যতম গ্র্যান্ড শো। দিল্লি দখলের ডাকে সরগরম হবে কলকাতা। ঠিক হয়েছে, এই মঞ্চেই বাংলার সংস্কৃতির সম্পদকে দেশের সামনে তুলে ধরবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া– এই পাঁচ জেলাকে কেন্দ্র করেই আদিম যুগ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে উঠে এসে নতুন রূপ পেয়েছে বাংলার মূল লোকসংস্কৃতি। বাংলার ছৌ নাচ পৃথিবী বিখ্যাত। তার সঙ্গে ধামসা-মাদল, বাউল গানের সঙ্গে কীর্তন, উত্তরের ভাওয়াইয়ার মতো অসংখ্য বলিষ্ঠ ঐতিহ্যশালী লোকসংস্কৃতি নিয়ে বাংলা সমৃদ্ধ। সূত্রের খবর, উনিশের ব্রিগেডকে শুধু রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবেই ব্যবহার করতে চান না তৃণমূলনেত্রী। চান বাংলার লোকসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে গোটা দেশের সামনে সেই মঞ্চেই তুলে ধরতে। এখনও পর্যন্ত যা খবর, ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের কর্মসূচি শুরুর আগে ধামসা-মাদলের ধ্বনিতে কাঁপবে কলকাতা। তার জন্য মূলত ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে আনা হচ্ছে অসংখ্য ধামসা-মাদল। থাকছে খোল-কীর্তনের আয়োজনও। তা-ও বীরভূমের সেই বিখ্যাত খোল-কীর্তণ। বিজেপির রথ নিয়ে কর্মসূচির আগে যা তুলে দেওয়া হয়েছিল জেলার কীর্তনীয়াদের কাঁধে।
[রাজ্যে এবার ভোট দেবেন প্রায় সাত কোটি মানুষ, তালিকা প্রকাশ কমিশনের]
এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, তাতে ব্রিগেডের জন্য ৪টি মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। মূল মঞ্চে থাকবেন তৃণমূলনেত্রী-সহ জাতীয় স্তরের নেতারা। সঙ্গে অবশ্যই তৃণমূলের কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। পরের মঞ্চটিতে থাকবেন দলের সাংসদ, বিধায়ক ও মেয়ররা। তৃতীয় মঞ্চে বসবেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও অন্য পদাধিকারীরা। চতুর্থ মঞ্চটি থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য। যেখানে দেশের নেতাদের সামনে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে যতটা সম্ভব বড় মাত্রায় তুলে ধরার জন্য দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।
উনিশের মঞ্চ হল হাই ভোল্টেজ শো। বিজেপি-বিরোধীদের একজোট করে সেই মঞ্চে দিল্লি দখলের বার্তা দেবেন মমতা। তবে শুধু রাজনৈতিক বার্তাই নয়, গোটা বাংলা যে তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, তারও একটা নির্দশন ওই মঞ্চেই তুলে ধরবেন তৃণমূলনেত্রী। যদিও বিশেষজ্ঞ মহলের আরও একটি ধারণা। কবীর সুমনের গান আছে, “ধুন্দুবি বেজে ওঠে দ্রিমদ্রিম রবে/সাঁওতাল পল্লিতে বিপ্লব হবে”। ধামসা-মাদল মানেই বিপ্লবের ধ্বনি। প্রবল রবে শত্রুকে হুঙ্কার দেওয়ার একটা রেওয়াজ। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, বাংলার এই ঐতিহ্যকে দেশের সামনে তুলে ধরাই শুধু নয়, ধামসা-মাদলের ধ্বনির মাধ্যমে দেশজুড়ে বিপ্লবের হুঙ্কার দেবেন তৃণমূলনেত্রী।
ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দলীয় নেতৃত্ব জানাচ্ছে, উনিশ জানুয়ারি কলকাতায় তিল ধারণের জায়গা থাকবে না। প্রতিটি জেলা থেকে অসংখ্য বাস ঠিক করা হয়েছে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাদের প্রতিটি গ্রুপে ধামসা-মাদলের দল থাকছে। বাকিরা যাচ্ছে ট্রেনে। নেতৃত্বের কথায়, ব্রিগেডের মূল কর্মসূচির আগে গোটা কলকাতায় ধ্বনিত হবে ধামসা-মাদলের শব্দে গমগম করবে কলকাতা। বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা। প্রতিটি দলই দু’দিন আগে কলকাতায় এসে পৌঁছবে। ট্রেন পৌঁছবে একদিন আগে। বিজেপির রথ কর্মসূচির সময় পবিত্র যাত্রার জন্য কীর্তনীয়াদের কাঁধে অসংখ্য খোল-কীর্তন তুলে দিয়েছিলেন বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেইসব কিছু নিয়েই কীতর্নীয়ারা দু’দিন আগেই কলকাতা পৌঁছবেন বলে জানিয়েছেন অনুব্রত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.