শুভময় মণ্ডল: পণপ্রথা উঠে গিয়েছে। তবে তত্ত্ব আদানপ্রদানের রীতি আজও অটুট। কিন্তু আজকের যুগের মেয়ে কেন তত্ত্ব দিয়ে বিয়ে করবেন? জীবনের বিশেষ মুহূর্তের আগে বারবার সেই প্রশ্নই উঁকি দিয়েছে বাগবাজারের রায়ার মনে। তাই চেনা স্রোতের উলটোদিকে হেঁটে শ্বশুরবাড়িতে তত্ত্ব পাঠাতে নারাজ তন্বী। পরিবর্তে অনাথ আশ্রমের মোট একশো সত্তরজন ভাইকে পাঞ্জাবি এবং বাসনপত্র উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সাতপাকে বাঁধা পড়তে চলা রায়া। শুক্রবার বেনারসি পরে বউ সাজার আগেই তাঁর ভাইদের কাছে পৌঁছে যাবে উপহার। মেয়ের ধনুকভাঙা পণকে বাস্তব রূপ দিতে বদ্ধপরিকর রায়ার বাবাও।
বাগবাজারের বাসিন্দা রায়া এবং অনীশ। ওষুধ সরবরাহকারী হিসাবেই নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছেন অনীশ। ব্যবসার কাজের ফাঁকে প্রায় বছরতিনেক আগে রায়ার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতা। পাশাপাশি পা ফেলে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে দু’টি মন সমস্ত বাধা পেরিয়ে এক হয়ে গিয়েছে তা যেন নিজেরাও টের পাননি। মনের মানুষের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে এবার বাধা পড়তে চলেছেন রায়া এবং অনীশ। পরিবারের সিদ্ধান্তে শুক্রবার বিয়ে হওয়ার কথা তাঁদের। ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র মেয়ে রায়া। তাই ‘রাজকন্যার’ বিয়েতে যে এলাহি আয়োজন হবে, তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। বিয়ের প্রস্তুতির শুরুতে বাবা প্রশ্ন করে বসেন কী লাগবে মেয়ের? আদুরে রায়ার উত্তর, “বরের বাড়িতে তত্ত্ব যাক তা চাই না। পরিবর্তে অনাথ আশ্রমের মোট ১৭০ জন ভাইকে বিয়েতে পাঞ্জাবি উপহার দিতে চাই। অনাথ আশ্রমে বেশ কিছু বাসনও দিতে চাই।”
মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যান রায়ার বাবা। প্রশ্ন করে বসেন কীভাবে অনাথ শিশুদের সঙ্গে আলাপ হল রায়ার। ওই তরুণী বলেন, “একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় একটি বল আমার গায়ে এসে পড়ে। পিছন ফিরে তাকানোর আগেই ‘দিদি’ বলে ডাক শুনতে পাই। সেই আলাপ অনাথ শিশুদের সঙ্গে। তারপর থেকে প্রায় রোজই অনাথ আশ্রমে যাতায়াত করতাম।” ভাইফোঁটা, রাখির দিন যখন প্রত্যেক বাড়ির মেয়েরা নিজেদের দাদা-ভাইয়ের নিয়ে ভাবনায় মত্ত, তখন রায়ার মনে ঘুরত শুধু অনাথ শিশুদের কথা। তাদেরই ভাই ভেবে রায়া কখনও দিয়েছে ভাইফোঁটা, তো কখনও তাদের হাতে বেঁধেছে রাখি। দিয়েছে উপহারও।
অনাথ শিশুদের উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্তকে মানতে কোনও সমস্যা হয়নি রায়ার বাবার। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনেদের তত্ত্ব না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। জীবনের বিশেষ দিনে মেয়ের ভাবনাকে অবহেলা করতে মন চায় না তাঁর। এই পরিস্থিতিকে বাবাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে অনীশের সঙ্গে কথা বলেন রায়া। অনীশ যদিও রায়ার সিদ্ধান্ত মানতে প্রথমে রাজি ছিলেন না। তবে জীবনের বিশেষ দিনে অপছন্দ সত্ত্বেও হবু স্ত্রীর দাবি মেনে নিয়েছেন ওই যুবক। তাই উপহার দেওয়ার আয়োজন সাড়া। পাঞ্জাবি, বাসনপত্র কেনা হয়ে গিয়েছে। বেনারসি পরে বউ সাজার আগেই তার ভাইদের কাছে পৌঁছে যাবে উপহার। ১৭০ জন অনাথ শিশুকে নিমন্ত্রণও করেছেন রায়া। বিয়েবাড়িতে আসবে বলে ‘দিদি’কে কথা দিয়েছে খুদেরা। তবে আফশোস একটাই, রাত একটার সময় লগ্ন হওয়ায় রায়া-অনীশের বিয়ে দেখার অনুমতি দেবে না অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষ। তাই জীবনের বিশেষ মুহূর্তে ‘দিদি’র পাশে থাকা হবে না ভাইদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.