গৌতম ব্রহ্ম: একেই বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জাদু। নাড়ির স্পন্দন থেমে গিয়েছিল। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল চোখের মণি। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ এতটাই নেমে গিয়েছিল যে তা রেকর্ড করতে পারছিল না পালস অক্সিমিটার। কার্যত ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছিল রোগিণীর। বাড়ির লোককে সেই কথা জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু হাল ছাড়েননি ডাক্তারবাবুরা। সিপিআর দিয়ে, ট্র্যাকিওস্টমি করে, ভেন্টিলেশনে রেখে শেষ চেষ্টা করছিলেন। তাতেই ‘মিরাকল’। ২ ঘণ্টা পর সেই ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া তরুণীর চোখের মণি নড়ে ওঠে। কাঁপতে থাকে ঠোঁট। আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন ডাক্তারবাবুরা।
[ শীতলার স্নানযাত্রা’য় ডিজে রুখতে একজোট সালকিয়ার বাসিন্দারা]
শোভা দেবী। বাড়ি বারাকপুর। ডান চোয়ালে টিউমারের মতো হয়েছিল। এমআরআই গাইডেড এফএনএসি করাতে শোভাকে ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রোগীকে অচেতন করে এমআরআই মেশিনে ঢোকানো হয়। তারপরই ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’। বন্ধ হয়ে যায় শ্বাসপ্রশ্বাস। সজাগ ছিলেন অ্যানাস্থেটিস্ট। তিনি অ্যাম্বু ও ‘ট্রিপল ম্যানুভার’ দিয়ে কোনওমতে রোগিণীর শ্বাসপ্রশ্বাস চালু করেন। কিন্তু চোয়াল ছেড়ে দিলেই ফের বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল শ্বাসনালির দরজা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অ্যানাস্থেটিস্ট যোগাযোগ করেন সুপার অফিসে। খবর যায় ‘সিসিইউ ইনচার্জ’ ডা. শুভ পালের কাছে। সব শুনে শুভবাবু দ্রুত রোগীকে সিসিইউ-তে আনতে বলেন। সেই অ্যানাস্থেটিস্ট অ্যাম্বু দিতে দিতে, ম্যানুভার করতে করতে কোনওক্রমে সিসিইউ-তে নিয়ে আসেন শোভাকে। ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে দশ। ডা. এ রায়ের অধীনে রোগীকে ভরতি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই ভেন্টিলেশনে রেখে শুরু হয় চিকিৎসা। ডা. পাল জানালেন, রক্তচাপ ষাট বাই তিরিশ হয়ে গিয়েছিল। ‘ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নাড়ির স্পন্দন। হার্ট বিট হয়ে গিয়েছিল ১৬০। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পালস অক্সিমিটারে রেকর্ড করা যাচ্ছিল না। ‘আর্টারিয়াল ব্লাড গ্লাস অ্যানালাইজার’ (এবিজি)-এ অক্সিজেনের আংশিক উপস্থিতি দেখাচ্ছিল ২২। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল চোখের মণি। ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। পরিবারকে সেই আভাসও দেওয়া হয়। এরপরই হয় ম্যাজিক।
চিকিৎসক ডা. সুরঞ্জন স্যান্যাল জানালেন, ওষুধের জেরে চেতনা হারিয়েছিলেন শোভা। চোয়ালের টিউমার শ্বাসনালির পথ আটকে দিয়েছিল। চৈতন্য থাকাকালীন হলে চোয়াল নাড়িয়ে ওই মাংসপিণ্ড সরিয়ে দিতেন শোভা। কিন্তু তা হয়নি। প্রথমে ট্র্যাকিওস্টমি করে শোভার শ্বাস নেওয়ার বিকল্প পথ বের করা হয়। ঘণ্টা দু’য়েক পর হঠাৎ করেই শোভার ‘ব্রেন’ জাগতে শুরু করে। প্রথমে চোখের মণি, তারপর ঠোঁট কাপতে শুরু করে। নড়তে শুরু করে হাত-পা। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও দু’ ঘণ্টার মধ্যে বেড়ে যায়। এবিজি হয় ৭০.৪। সুরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, শোভা এখন পুরোপুরি বিপন্মুক্ত। আজ, সোমবার জেনারেল বেডে দেওয়া হবে। দু’দিন পর্যবেক্ষণ। তারপরই ছুটি। শোভার দাদা কার্তিক রবিদাস জানালেন, “আগে দু’বার এমআরআই করাতে এসে বোনকে ফেরত নিয়ে যেতে হয়েছে। ও আওয়াজ সহ্য করতে পারছিল না। তাই এবার বাধ্য হয়েই ইঞ্জেকশন দিয়ে অচেতন করে এমআরআই করতে ঢোকানো হয়েছিল।” কাতির্কবাবু জানালেন, “যা অবস্থা হয়েছিল তাতে আমরা আশা কার্যত ছেড়েই দিয়েছিলাম। ডাক্তারবাবুরা যমের মুখ থেকে বোনকে ফিরিয়ে এনেছেন।”
[ গ্রন্থের আবরণ তৈরির নেশাকে পেশা করে প্রত্যেক বইমেলায় হাজির এই ব্যক্তি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.