স্টাফ রিপোর্টার: সোমবার থেকেই ভাঙা শুরু হচ্ছে বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের বিপজ্জনক বাড়ি। প্রথমেই বাড়িগুলির বিপজ্জনক অংশগুলি ভেঙে সরিয়ে ফেলা হবে। তারপর মূল কাঠামো ভাঙা হবে। তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করবে কেএমআরসিএলের নিজস্ব সংস্থা। পুরসভার অনুমতি নিয়েই তা করা হবে। আগেই কেএমআরসিএলের ইঞ্জিনিয়ররা দফায় দফায় বাড়ি পরীক্ষা করেছেন। সেই তালিকায় প্রথম ধাপেই উঠে এসেছিল এই ৫টি বাড়ি। কিন্তু শুরুতে বাড়ি ভাঙায় সম্মতি ছিল না বাসিন্দাদের। পরবর্তীতে এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার অনুমতি দেন তাঁরা। এরপরই শুরু হয় কাজ।
ইতিমধ্যেই বাড়ি থেকে গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে আনার ব্যবস্থা চলছে। সূত্রের খবর, বউবাজার বিপর্যয়ের পর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে যে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটির তত্ত্বাবধানেই চলছে সমস্ত কাজ। যত শীঘ্রই সম্ভব কাজ শেষ করা হবে বলেই সূত্রের খবর। পাশাপাশি নজরে রাখা হচ্ছে কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও। আইন অনুযায়ী যেহেতু বাড়ির মালিকের সম্মতি ছাড়া বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজ করা যায় না সে কারণেই এতদিন বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করা যায়নি। এবার বাসিন্দাদের সম্মতি মিলতেই তড়িঘড়ি শুরু হল কাজ। রবিবার সকালেও বহু বাসিন্দা আটকে থাকা মালপত্র বের করেছেন। বাড়ি ভাঙার ছাড়পত্র দিলেও মন ভারাক্রান্ত এই বাসিন্দাদের।
১৩এ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়ন্ত শীল যেমন বললেন, “বাপ-ঠাকুরদার আমলের বাড়ি। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। এ বাড়ি যে আমাদের থাকবে না তা কখনও দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।” কসবার ফ্ল্যাটে থাকছেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সস্ত্রীক সুজিত শীল। বলেন, “আমিও তো কর্মজীবনে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু এমন ভরাডুবি কখনও দেখিনি। সব স্মৃতি যে এভাবে মুছে যাবে কীভাবে বুঝব!” কেএমআরসিএলের জেনারেল ম্যানেজার এ কে নন্দী জানান, “বাড়ি ভাঙার জন্য তিনটি পরিবারের সম্মতি মিলেছে। বাকি দু’টি পরিবার হোটেলে আছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সম্মতি নেওয়ার চেষ্টা চলছে। পরবর্তীতে আরও বাড়ি ভাঙার প্রয়োজন হলে তা স্থির করবে কেএমআরসিএল-এর বিশেষজ্ঞ পরিদর্শকদল।”
এদিকে পুরোপুরি বন্ধ না হলেও সুড়ঙ্গে কাদা-জল বের হওয়া প্রায় বন্ধই বলা চলে। মাঝমধ্যে একটু-আধটু বেরোচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ররা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন করে আর কোনও ধসের ঘটনাও ঘটেনি। তবে মদন দত্ত লেনের বেশ কিছু বাড়ি খালি করা হয়েছে নিরাপত্তার কারণে। মাটির বুনট ধরে রাখতে সুড়ঙ্গে তিনটি স্তরে কংক্রিটের দেওয়াল তৈরির কাজ চলছে। প্রথম স্তরে কংক্রিট ও স্টিলের দেওয়াল। দ্বিতীয় স্তরে বালির বস্তা। আর তৃতীয় স্তরে আরও একটি কংক্রিট ও স্টিলের দেওয়াল দেওয়া হচ্ছে। মেশিনের সাহায্যে মাটির উপর দিয়ে এদিনও চলছে গ্রাউটিংয়ের কাজ। ঢালা হয়েছে সিমেন্ট এবং রাসায়নিকের মিশ্রণ। কেএমআরসিএল সূত্রে খবর, ৬০০-র বেশি বাসিন্দাকে বিভিন্ন হোটেলে রাখা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.