ফাইল ছবি
গোবিন্দ রায়: ২১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তর কলকাতার নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের মিত্র বাড়িতে নজর কাড়ে সন্ধিপুজো। পদ্মফুল দিয়ে নয়, রীতি মেনে ১০৮টি অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয় দুর্গার। নীলফুলে সেজে ওঠেন দেবী। তবে ব্যতিক্রমী ফুলই নয়, এই বাড়ির নৈবেদ্যতেও রয়েছে বিশেষত্ব। কুলের আচার, আট রকমের বড়ি দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। প্রথম কুল ওঠার পর সেই কুল দিয়ে আচার বানানো হয় মায়ের জন্য। পুজোতে মিষ্টির বৈচিত্র্যও আলাদা। এখানে প্রায় আট থেকে দশ রকমের নাড়ু হয় দেবীর ভোগের জন্য। এ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের নারকেলের মিষ্টি, গজা-সহ নানা মিষ্টি বাড়িতেই তৈরি করেন মহিলারা।
উত্তর কলকাতার (North Kolkata) বিখ্যাত রাস্তা নীলমণি মিত্র স্ট্রিট। সেই নীলমণি মিত্রের নাতি রাধাকৃষ্ণ মিত্র এই পুজোর (Bonedi Barir Durga Puja) প্রবর্তন করেন। সেই থেকেই উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলির অন্যতম এই মিত্রবাড়ির পুজো। পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আড়িয়াদহ থেকে ভাগ্যান্বেষণে সুতানুটি অঞ্চলে আসেন এই পরিবারের জগন্নাথপ্রসাদ মিত্র। রাঢীয় কায়স্থ সম্প্রদায়ভুক্ত দর্জিপাড়া মিত্র বংশের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। তিনি কী ব্যবসা করতেন তা জানা যায় না। তবে তাঁর পৌত্র দুর্গাচরণ ছিলেন সিরাজউদ্দৌলার ‘কোর্ট জুয়েলার’। হিসেবের খাতায় তাঁর লেখা গান পড়ে খুশি হয়ে দুর্গাচরণ রামপ্রসাদকে আজীবন মাসোহারার ব্যবস্থা করে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সাহিত্য-সঙ্গীতচর্চার জন্য।
দুর্গাচরণের ভ্রাতুষ্পুত্র নীলমণি মিত্রও ছিলেন সে যুগের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। নীলমণি মিত্রর পৌত্র ব্যবসায়ী রাধাকৃষ্ণ মিত্র ১৮০৬-এ দর্জিপাড়া মিত্রবাড়ির দুর্গোৎসবের সূচনা করেন। আগে এখানে পাঠা বলি হত কিন্তু রাজকৃষ্ণ মিত্রের পায়ের কাছে একবার একটি ছাগল চলে আসে। সেই থেকে এখানে বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
মিত্র বাড়ির বড়ো কন্যা অনসূয়া বিশ্বাস মিত্র এই বাড়ির প্রতিমার বৈশিষ্ট্য জানান। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী মূর্তি হয় দেবীমুখ অর্থাৎ টানা টানা চোখের প্রতিমা এবং কার্তিক ও অসুরের মুখ হয় মানবমুখের আদলে। প্রতিমাটি হয় এক কাঠামোর। এখানে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিন ধরে চলে কুমারী পুজো। দশমীর দিনে পান, মাছ খেয়ে বাড়ির মহিলারা মাকে বরণ করেন। রীতি মেনে সিঁদুর খেলায় মাতেন বাড়ির মেয়ে-বউ, প্রতিবেশীরা। প্রথা মেনে বাড়ির পুরুষরা আজও সাদা ধুতি পড়ে উড়নি গায়ে দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিতে যান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.