ক্ষিরোদ ভট্টাচার্য: চিকেন পক্স সংক্রমিতের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হল অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত এক রোগীর! কিন্তু সংক্রমণ তো দূরে থাক! বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের পর প্রায় ১০ দিন কেটে গিয়েছে দিব্য সুস্থ আছেন গ্রহীতা। সৌজন্যে খাস কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া দুরারোগ্য রক্তরোগ। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করেই রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। হুগলির বাসিন্দা চন্দন মান্নাকে যে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তা তাঁর রক্তের সঙ্গে ম্যাচ করলেও দাতা কিছুদিন আগেই চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয়। বস্তুত, গ্রহীতার অস্থিমজ্জা বের করে নেওয়া হয়। গ্রহীতার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয়। মাঝের সময়ে গ্রহীতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শূন্য থাকে। এমনকী বাতাসে ভেসে থাকা ধুলিকণার মধ্যে জীবাণু থাকলেও সংক্রমিত হতে পারে রোগী। এতটাই সাবধানে রাখতে হয় রোগীকে। গত দশদিন ধরে মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের দূষণমুক্ত ঘরে (হেফাফিল্টার রুম) ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছেন চন্দন।
মেডিক্যাল কলেজের তথ্য বলছে, বছর ৪৫-এর চন্দন মান্না দিব্য ভাল ছিলেন। মাস ছয়েক আগে আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অসম্ভব ক্লান্তি। রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেল লোহিতরক্ত কণিকা ও প্লেটলেট অত্যন্ত কম। মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগে দেখাতে আসেন। চিকিৎসকরা ফের রক্ত পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন যে কোনওভাবেই হোক মারাত্মক রক্তরোগ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত চন্দন। লোহিত রক্ত কণিকা ও প্লেটলেট দ্রুত কমতে শুরু করেছে। অনেকটা রক্তের ক্যানসারের মতো। সব দেখেশুনে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করে চন্দনকে রোগমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন মেডিক্যালের বিশেষজ্ঞরা। চন্দনবাবুর আত্মীয় বছর ১৪ এক কিশোরের থেকে অস্থিমজ্জা নেওয়া হয়।
তৈরি হল মেডিক্যাল বোর্ড। পিজিআই চণ্ডিগড়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা. রতিরাম শর্মা, ডা. রাজীব দে, ডা. যোগীরাজ রায়, মেডিসিনের অধ্যাপক ডা বিভুতি সাহা, মেডিসিনের বিভাগীয় অধ্যাপক ডা. সৌমিত্র ঘোষ, হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রসূন ভট্টাচার্য, ডা. বিপ্লবেন্দু তালুকদার ও মাইক্রো বায়োলজিস্ট অধ্যাপক ডা. ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. মৈত্রী ভট্টাচার্যকে নিয়ে।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, দাতার থেকে অস্থিমজ্জা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে দেখা যায় অত্যন্ত কম হলেও চিকেন পক্সের জীবানু রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. অঞ্জন অধিকারীর কথায়,‘‘নিঃসন্দেহে চিকেনপক্স সংক্রামক। তবে র্যাশ বেরোনোর পর দু’দিন পর্যন্ত ভাইরাস সক্রিয় থাকে।” ডা. প্রসুন ভট্টাচার্যের কথায়,‘‘অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পর চন্দনের রক্তের ডিএনএ পিসিআর (পলিমার চেন রিঅ্যাকশন) করে দেখা যায় চিকেন পক্সের কোনও জীবানু নেই।’’ প্রসুনবাবুর কথায়,‘‘আসলে সেই সময় আমাদের কাছে বিকল্প পথ ছিল না। তাই ঝুঁকি নিতেই হয়েছিল।’’ আর সেই ঝুঁকিতেই জিতে গেল শতাব্দী প্রাচীন মেডিক্যাল কলেজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন রাজ্যের চিকিৎসায় আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করল মেডিক্যাল কলেজ। অঞ্জনবাবুর কথায়,‘‘হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ। অসম্ভব ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী সব ঠিক থাকলে দিন সাতেক পর বাড়ি ফিরবেন চন্দন মান্না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.