স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসক হিসাবে পেশাগত জীবনে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তিনজনকে নতুন জীবন দিয়ে যাচ্ছেন অ্যানাস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা শ্যাম রায় (৪৩)। আর এই ঘটনা রাজ্যের চিকিৎসা জগতে এক অনন্য নজির হয়ে রইল। ডা. সংযুক্তা শ্যাম রায়ের পরিবারকে কুর্নিশ জানিয়েছে চিকিৎসক মহল। অঙ্গদানের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন এই চিকিৎসক।
মঙ্গলবার অ্যাপোলোয় ব্রেন ডেথের পর তাঁর মরণোত্তর লিভার ও দু’টি কিডনি নিয়ে নতুন জীবন পাওয়ার কথা কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলির তিন বাসিন্দার। রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (রোটো) সূত্রে জানা গিয়েছে, গভীর রাতে তাঁর মরণোত্তর অঙ্গ আহরণ (রিট্রিভ্যাল) ও সংরক্ষণের (হার্ভেস্টিং) প্রক্রিয়া শুরু হয়। আজ, বুধবার গ্রহীতাদের শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপারেশন করা হবে। পাশাপাশি আরও একজন চিকিৎসকের কর্ণিয়া পাবেন বলে খবর।
এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী সংযুক্তা শ্যাম রায় অ্যাপোলো হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত শনিবার তাঁর মারাত্মক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। বেশ কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় হৃদযন্ত্র। পরে তা সচল হলেও রক্ত সরবরাহের অভাবে ক্ষতি হয়ে যায় মস্তিষ্কের। সোমবার সকালে চিকিৎসকরা বুঝে যান, রোগিনীর ব্রেন ডেথ হতে চলেছে। এরপরই মৃতার চিকিৎসক স্বামী অঙ্গদানের ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে দেন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে সংযুক্তার হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্য নেওয়া না-হলেও লিভার ও দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য গ্রহীতার খোঁজ শুরু হয়। ঠিক হয়, অ্যাপোলোরই এক রোগীর শরীরে লিভার প্রতিস্থাপিত হবে। একটি কিডনি পাবেন এসএসকেএমের এক রোগী এবং অন্য কিডনিটি পাবেন দমদম আইএলএস হাসপাতালের এক রোগী।
কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজের সঙ্গে ডা. প্রতিম সেনগুপ্ত যুক্ত থাকবেন বলে সূত্রের খবর। প্রাথমিকভাবে এসএসকেএমে তিনজন ও আইএলএসের চারজন কিডনি বৈকল্যের রোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে দু’জন পাবেন দু’টি কিডনি। এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসকের কর্নিয়া থেকে দৃষ্টি পাবেন এক জন্মান্ধ। তাই বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল দিশা কর্নিয়া সংগ্রহ করেছে। বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সমর বসাকের কথায়, “মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যু। অত্যন্ত দুঃখের। কিন্তু আমার মনে পড়ছে না কোনও চিকিৎসক মৃত্যুর পরেও এমন নজির করতে পারেন। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে বলি যে এমন নজির যেন আমরাও গড়তে পারি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.