Advertisement
Advertisement

ভিনধর্মের যুবকের সঙ্গে প্রেম, ধর্মান্তকরণের চোখরাঙানি এড়িয়ে বিয়ে দৃষ্টিহীন তরুণীর

ঘটনাটি অভিজাত উপনগরী বিধাননগরের।

Blind couple tied knot in Bidhannagar
Published by: Sayani Sen
  • Posted:March 3, 2019 10:54 am
  • Updated:March 3, 2019 10:54 am  

কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর:  ছোটবেলায় ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনার সময় আঙুলে আঙুল ঠেকে যেত। কৈশোরে সেই স্পর্শ তরঙ্গ তুলেছিল। যৌবনে দুই মন জোড়া লাগে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অপেক্ষা ছিল। সে লক্ষ্য সম্পূর্ণ হতেই রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে আনুষ্ঠানিক বিয়েটা সেরে ফেলেন দু’জনে। কোনওদিন মনেই হয়নি তাঁরা দু’জনে দুটো ভিন্ন ধর্মের মানুষ। দুই পরিবার একজোট হয়ে দু’জনের বিরুদ্ধে পাঁচিল তুলে দেওয়ার আগে পর্যন্ত ধর্মের কড়া অনুশাসন টের পেলেন দু’জনে। এক বাড়ি সটান বিয়েটাকেই নাকচ করে দিল। আর অপর বাড়ির অভিভাবকরা আরও একধাপ এগিয়ে ধর্মান্তকরণের দাবি তুললেন। এখন এই যুগল যান কোথায়?

ঘটনাটি অভিজাত উপনগরী বিধাননগরের। চলতি সপ্তাহেই বিধাননগর কমিশনারেটের একটি থানায় এই সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেছেন এই যুগল। এখন তাঁরা অবশ্য স্রেফ যুগল নন। পরিবার-আত্মীয়স্বজন-অনাত্মীয়-শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের চোখরাঙানি অগ্রাহ্য করে স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করেছেন। তাঁদের চেনা সমাজের কাছে না হোক, আইনের চোখে তাঁরা এখন স্বামী-স্ত্রী। আইনের এক রক্ষকই এই দম্পতির পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন। তাঁদের পরিবারকে আইনের অনুশাসন মনে করিয়ে দিয়ে হুমকির রাস্তা থেকে সরে আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রয়োজনে কড়াভাবে আইন প্রয়োগ করতে পিছপা হবেন না বলেও জানিয়েছেন। এখন সুখে ঘরকন্না করছেন এই দম্পতি। স্থানীয় থানার পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ায় এখন নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদে সংসার করতে পারছেন। বর্তমানটা যতটা সুখে কাটছে তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতাটা ততটাই বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। তার আগে পাত্র-পাত্রীর পরিচয়ের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

Advertisement

[বিজেপির ‘বৈশাখী’ তাস! শোভন ঘনিষ্ঠকে প্রার্থী করতে চেয়ে ফোন মুকুল রায়ের]

নিরাপত্তার খাতিরে তাঁদের নাম প্রকাশ করা উচিত নয় বলে ধরে নেওয়া যাক যুগলের নাম রুপাই আর সাজু। তবে বর্তমান গল্পটা অতীতের মতো বিয়োগান্তক নয়। পুলিশ হস্তক্ষেপ না করলে তা হওয়ার বিলক্ষণ সম্ভবনা ছিল। সাজু জন্মান্ধ। ছোটবেলায় রুপাইয়ের চোখ খারাপ হয়। বাবা-মা গত হওয়ার কারণে প্রবল অর্থাভাবে ক্যাটারাক্ট অপারেশন করা হয়নি তার। ফলে সেই বয়সেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে যায় সে। যুবক বয়সে অস্ত্রোপচারের পর সামান্য দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান রুপাই। ছোটবেলায় দু’জনেই ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনা করতে ভরতি হয়। সেখানেই বন্ধুত্বের শুরু। ব্রেইলের মাধ্যমে মাধ্যমিক পাশ করে দুই কিশোর-কিশোরী। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য দৌড়। দক্ষিণ কলকাতার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ফিল পাশ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলে ২০১৩ সালে শিক্ষকতার চাকরিতে ঢোকেন সাজু। আর ডিসট্যান্স কোর্সে ইংরেজি অনার্স নিয়ে বিএ শেষ করে রুপাই ২০১৫ সালে একটি সরকারি সংস্থার লাইব্রেরিতে ক্লারিক্যাল পোস্টে চাকরিতে যোগ দেন।
সুশিক্ষিত এবং কর্মজীবী এই তাঁদের বর্তমান স্টেটাস। এই স্টেটাস জানিয়েই পুলিশ আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। পুলিশকে জানিয়েছিলেন, “পরিবারের হুমকির মুখে পড়ে বিয়ে ভেঙে যেতে বসেছে তাঁদের। এক পরিবার ধর্মান্তরিত করতে চাপ দিচ্ছে। নিয়মিত ভয় দেখানো হচ্ছে তাঁদের। নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইতে এসেছেন।” এরপর পুলিশ দুই পরিবারকে ডেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে অনুরোধ জানান। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করবেন না বলে জানিয়ে দেন। “এরপর নরম মনোভাব দেখাচ্ছে দুই পরিবার,” বলে জানিয়েছেন রুপাই। ২০১৭ সালের ২ জুন তাঁরা স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। বিয়ের ঘটনা ২০১৮ সালে বাড়িতে জানান এই দম্পতি। তারপর থেকে হুমকি শুরু হয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। সাজুর বাবা, মা, দাদা ও ভাই এবং রুপাইয়ের দুই দাদা এই ঘটনায় জড়িত বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তবে ধর্মান্তরিত হওয়ার চাপ মূলত সাজুর বাড়ি থেকে দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। ভালবাসার খাতিরে ধর্মান্তরিত হতেও রাজি হয়ে গিয়েছিল রুপাই। তবে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করেছিলেন সাজু নিজে। স্বামীকে ধর্মান্তরিত হতে বাধা তো দিয়েছেনই, নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন বছর তিরিশের এই সাহসী তরুণী।

[চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত এসএসসি প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করলেন শিক্ষামন্ত্রী]

সব ভাল যার শেষ ভাল। বর্তমানের সাজু-রুপাইয়ের কাহিনি এক পুলিশ আধিকারিকের হস্তক্ষেপে মিলনাত্মক হয়ে উঠেছে। ধর্মের কচকচানি ভুলে দুই পরিবারই বিয়ে মেনে নিয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর কি ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠান করে বিয়ের আসনে বসবেন বর-কনে। শনিবার রুপাই ফোনে জানিয়েছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফ প্রকাশ্যে নিয়ে আসবেন তাঁরা। ততদিন পর্যন্ত সমাজকে সহনশীল হতে সময় দিতে চান তাঁরা। সাজু-রুপাইয়ের হিম্মতকে লাখ কুর্নিশ জানিয়েছেন তাঁদের একাধিক বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement