শুভময় মণ্ডল: জুলাই মাসের ১৮ তারিখ দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একঝাঁক শিল্পী ও কলাকুশলী। তারপর কলকাতা ফিরে আরও কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে
তোলেন ‘বঙ্গপ্রয়াস’ নামে একটি সংগঠন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে নতুন এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত, অগ্নিমিত্রা পাল ও অঞ্জনা বসু-সহ অন্যরা।পাশাপাশি জানান, বাংলার সংস্কৃতি, সাবেকিয়ানা, ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যকে বজায় রেখে যারা দীর্ঘদিন ধরে সনাতনি বারোয়ারি পুজোর গরিমা বহন করে আসছে। কলকাতার সেরকম ১০টি পুজোকে এবার শারদ সম্মান দেবে ‘বঙ্গপ্রয়াস’। এছাড়া ৩০টি আবাসনের পুজোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিমা, শ্রেষ্ঠ প্রতিমাশিল্পী, শ্রেষ্ঠ পরিবেশ এবং‘আজকের দশভুজা’বেছে নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। বলেন, প্রতিযোগিতার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শারদ সম্মান’। আর ট্যাগ লাইন ‘পদ্ম ছাড়া কি পুজো হয়?’
সম্প্রতি এই ট্যাগলাইনের উপর ভিত্তিতে করে প্রচারমূলক একটি ভিডিও তৈরি করেছে ওই সংগঠন। যে ভিডিওতে দেখানো হয়েছে রাম ও পদ্মফুলের সঙ্গে এই বাংলার পুরনো সম্পর্কের কথা। হিন্দুদের দুর্গা পুজোর জন্য মুসলিমদের পদ্ম চাষের গল্প। আদ্যন্ত সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে আসছেন একজন প্রৌঢ় ও এক যুবক। একটি দিঘির ধারে এসে প্রৌঢ় ব্যক্তিটি জনৈক আখতার ভাইয়ের নাম ধরে হাঁক পাড়েন। জল থেকে পদ্মফুল তুলতে তুলতে, ‘যাই ঠাকুরমশাই’ বলে সাড়া দিতে শোনা যায় মাথায় ফেজ টুপি পরা অন্য এক ব্যক্তিকে। দিঘির ধারে গিয়ে আখতার ভাইকে ঠাকুরমশাই বলেন, ‘কটা পদ্মফুল দে তো।’ তখন আখতার ভাই জিজ্ঞাসা করেন, দুগ্গাপুজোয় লাগবে নাকি। তার উত্তরে ঠাকুরমশাই জানান, ছেলেরা সবকিছু আনলেও পদ্ম আনেনি। এতে অবাক হয়ে ওঠেন আখতার ভাই। বলেন, ‘একি! পদ্ম ছাড়া কি দুগ্গাপুজো হয় নাকি? কটা দেব।’
ঠাকুরমশাই বলেন, ‘১০৮ টা পদ্ম দে।’ তার উত্তরে আখতার জানায়, ১০৮টা তো দেবই। সঙ্গে আরও কিছু নিয়ে যান কাজে লাগবে। এরপরই একটা পদ্মের জন্য রাম কী করেছিলেন সেই কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। একগাল হেসে আখতার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রাম, অকালবোধন, দুগ্গাঠাকুর ও পদ্ম নিয়ে গল্প শুনে আসছি। আমার বাবা যখন বেঁচে ছিলেন তখন বলতেন মা দুগ্গার পুজোয় পদ্মের যোগান দেওয়া মহা পুণ্যের কাজ। যতদিন পারবি দিয়ে যাবি। আমিও তাই সারাবছর ধরে পদ্মচাষ করে এই দিনটার অপেক্ষায় থাকি। চাষের পদ্ম মা দুগ্গার চরণে ঠাঁই পেলেই তবে আমার শান্তি। পদ্ম ছাড়া কী দুগ্গাপুজো হয় নাকি।’
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হওয়ার পরেই নেটিজেনদের মন কেড়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিরোধীরা যাদের সবসময় কটাক্ষ করে। সেই বিজেপির একটি শাখা সংগঠন, দুর্গাপুজোর পবিত্র মুহুর্তে
সম্প্রীতির যে বার্তা তাদের প্রচার ভিডিওর মাধ্যমে দিতে চেয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভারতীয় ঐতিহ্য ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা বিকাশের স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে এই ধরনের উদ্যোগই দরকার বলে জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.