ছবি: প্রতীকী
কৃষ্ণকুমার দাস: পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের নতুন উদ্যমে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গ বিজেপি (BJP, West Bengal)। শোনা যাচ্ছে, পুজো মিটতেই নতুন করে আন্দোলনে নামছে রাজ্যের গেরুয়া নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে কার্যত ধমক খেয়ে লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi Puja) পর এক সপ্তাহের মধ্যে ব্লক ও অঞ্চল কমিটি গঠন সম্পূর্ণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, বাম ছাত্র-যুবরা রাস্তায় নেমে জঙ্গি আন্দোলন করার গেরুয়া যুব শিবিরকেও এবার মাঠে নামাতে তৎপর হচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। বস্তুত সেই কারণে বিজেপির যুব মোর্চা কমিটি এবার রাজ্য সরকার বিরোধী আন্দোলন হুগলির সিঙ্গুর (Singur) থেকেই শুরু করতে চাইছে। দলের যুবদের এই প্রস্তাবের কথা শনিবার শ্রীরামপুর এক দলীয় কর্মিসভায় যোগ দিতে গিয়ে স্বীকার করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বলেছেন, ‘‘সিঙ্গুর থেকে আন্দোলন শুরু করে জেলায় জেলায় আইন অমান্য করার প্রস্তাব দিয়েছে যুব মোর্চা।’’
প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ করে দলের নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhiyan) কর্মসূচি চূড়ান্ত ফ্লপ করার পাশাপাশি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হওয়ায় এবার একটু বাড়তি সতর্ক বঙ্গ বিজেপি। বস্তুত এই কারণেই এদিন শ্রীরামপুরে দলের অভ্যন্তরীন বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের বুথ ও শক্তি কেন্দ্রগুলিকে আরও শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়েছেন সুকান্ত। শুধু তাই নয়, লক্ষ্মীপুজো মিটলেই সাতদিনের মধ্যে অঞ্চল ও ব্লক কমিটি গঠন সম্পূর্ণ করে রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন সভাপতি। আসলে প্রকৃত তথ্য হল, বাংলায় এখনও ৩০ শতাংশ বুথ কমিটিও গঠন করতে পারেনি রাজ্য নেতৃত্ব। সম্প্রতি ক্রস-চেকিং করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখেছেন, এতদিন দিল্লিতে বাংলা থেকে বঙ্গবিজেপির সংগঠন নিয়ে যে তথ্য পাঠানো হয়েছে তার অধিকাংশই ভুয়া। বস্তুত এই কারণে এবার চেয়ার বাঁচাতে আন্দোলনে নামছে বঙ্গ বিজেপি।
মহালয়ার (Mahalaya) পর থেকে কার্যত সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া বিজেপি নেতাদের জনসংযোগের আর কোনও কাজ নেই। অথচ উল্টোদিকে পুজোকমিটিগুলিকে সামনে রেখে শাসক তৃণমূল বাড়ি বাড়ি, প্রতিটি পরিবারে পৌঁছে গিয়েছে। নবান্ন অভিযান শেষে নানা নাটক-বিবৃতি করেও দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পারেননি রাজ্য নেতারা। অথচ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের মতো ইস্যু হাতে পেয়েও বঙ্গ বিজেপি আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, ডিসেম্বরেই বঙ্গ বিজেপির রাজ্য কমিটির খোলনলচে বদলে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে দিল্লি। আর সেই কারণেই প্রবল চাপের মুখে দাঁড়িয়ে এদিনই ফের নতুন করে আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করে নিজেদের চেয়ার বাঁচাতে চাইছেন সুকান্তরা। জানা গিয়েছে, কালীপুজোর পরে জেলায় জেলায় আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচি নিচ্ছে গেরুয়া শিবির। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কীভাবে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে, তার নেতৃত্বে কোন কোন নেতা থাকবেন, এসব নিয়েই আলোচনা হচ্ছে পদ্ম শিবিরের অন্দরে। অবশ্য কিছুদিন আগেই রাজ্য সভাপতি জানিয়েছিলেন, ‘উৎসব মিটে গেলে ফের শাসকদলের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে আন্দোলনের পথে নামা হবে’। তাই যেই কৃষক আন্দোলনের উপর ভর দিয়ে বাংলায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই আন্দোলনের পথেই সিঙ্গুর থেকে লড়াই শুরু করে ঘাসফুল শিবিরকে টেক্কা দিতে চাইছে বিজেপি। বস্তুত সেই কারণে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন ও লোকসভা ভোটের আগে কীভাবে বুথস্তরে কর্মীদের চাঙ্গা করা যায় তা নিয়েও দিল্লির সঙ্গে দফায় দফায় ভারচুয়াল বৈঠক চলছে বঙ্গ বিজেপির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.