বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: মুকুল রায়ের (Mukul Roy) তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনে আশার আলো বাম শিবিরে। এই ঘটনায় যে বাম ভোটাররা বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিলেন তাঁদের অনেকেরই মোহভঙ্গ হবে, সেইসঙ্গে ‘বিজেমূল তত্ত্ব’ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন। গেরুয়া শিবির দুর্বল হলে আখেরে লাল শিবিরের লাভ, ধারণা কমরেডকুলের শিরোমনিদের। তাই আপাতত পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ধীরে চলার নীতিতে ভরসা বাম শিবিরের।
৭৬ থেকে ০। ভোটে ভরাডুবির পর আকচাআকচি শুরু হয়েছে বাম শিবিরে। বামফ্রন্টের ভিতরে ও বাইরে এখনও চলছে দোষারোপ ও পালটা দোষারোপের পালা। ভোটপ্রচারে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বিজেমূল তত্ত্ব’ খাঁড়া করেছিল সিপিএম। একাধিক জনপ্রিয় ও চটুল গানের সুরে বাঁধাও হয় ‘টুম্পা সোনা’ এর মতো প্যারোডি। সমসাময়িক চাহিদা ও পছন্দের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় স্লোগান। মূলত পার্টির যুবদের উদ্যোগেই এই প্যারোডি ও স্লোগান। সেখানে বারাবার ‘বিজেমূল’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। তাতে আপত্তিও করেনি আলিমুদ্দিন। উলটে টুম্পা সোনার সুরে সুর মেলান সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমরা। প্রচারে নেতাদের গলায় স্থান পায় ‘বিজেমূল তত্ত্ব’। তৃণমূল ও বিজেপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন কমরেডরা। এর পিছনে বিভিন্ন যুক্তি ও ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়। কিন্তু ফল বেরনোর পর প্রমাণ হয় বিমানবাবুরা যতই গলার শিরা ফুলিয়ে বিজেমূল তত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করুন না কেন, মানুষ তা খারিজ করেছে। উলটে এবারও বামেদের ভোটের একটা বড় অংশ গেরুয়া বাক্সে চলে গিয়েছে। তাঁদের ঝুলিতে শূন্য।
এরপরেই শুরু হয় দোষারোপের পালা। বামফ্রন্টের অন্দরের পাশাপাশি বাইরে থাকা বামপন্থী অন্যান্য দলও ‘বিজেমূল তত্ত্ব’র জন্যই সিপিএমকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে একই সরলরেখায় দাঁড় করানোর ফলেই বামেদের শোচনীয় ফল বলে দাগিয়ে দেন সিপিআইএমএল লিবারেশনের মতো নকশালপন্থীরা। ‘এর পরেও ফিরে আসা যায়’ বা ‘শূন্য থেকে শুরু হোক’ বলে কটাক্ষ করেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্যরা। সেই কাদা ছোঁড়াছুড়ি আজও অব্যাহত। সাঁড়াশি আক্রমণে কার্যত কোণঠাসা আলিমুদ্দিন। এরমধ্যেই মুকুল রায়ের বিজেপি ত্যাগ হাসি ফুটিয়েছে বিমান-সূর্যদের মুখে। তবে এখনই বেফাঁস কোনও মন্তব্যে যেতে নারাজ আলিমুদ্দিন। তাঁদের আশঙ্কা যত দিন যাবে ততই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। আর ততই ‘বিজেমূল’ তত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যদের মুখে সমুচিত জবাব দেওয়া যাবে বলে মনে করছে লাল পার্টির নেতারা। ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন পার্টির একমাত্র সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “তৃণমূল বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় ফিরলেও সাম্প্রদায়িক বিরোধী কোনও বলিষ্ঠ অবস্থান নেই। তাই এই দলবদল। ভবিষ্যতে যে তিনি ফের এই শক্তির সঙ্গে হাত মেলাবেন না, তা হলফ করে বলা যায় না।” এই দলবদল চলতে থাকবে বলেই মনে করে সিপিএম। ফলে আরও দুর্বল হবে গেরুয়া শিবির। আর তৃণমূল বিরোধী বাম ভোট ফিরবে বলে ধারণা বাম নেতৃত্বের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.