ছবি: প্রতীকী
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) দিকে তাকিয়ে দিল্লির গেরুয়া নেতৃত্ব আপাতত প্রাথমিক নির্দেশিকা তৈরি করছে রাজ্য বিজেপির জন্য। নতুন কমিটিগুলি হয়ে গেলেই সেটা সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই নির্দেশিকার মধ্যে দিল্লির একটা নতুন কৌশল হতে চলেছে, দু-একটি জরুরি ব্যতিক্রম ছাড়া তৃণমূল থেকে এখন বিজেপিতে কাউকে নেওয়া হবে না। সিবিআই ও ইডিকে ব্যবহার করে কয়েকজনকে ভয় দেখানো হবে। এর মধ্যে তৃণমূলের যারা যোগাযোগ করবে বা করছে বিজেপির সঙ্গে। একাধিক বিধায়ক, ২ জন মন্ত্রী, ২ জন সাংসদও নাকি ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছেন। তাদের বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, রেজাল্ট দেখে তোমাকে দলে নেব কি না, তা ঠিক করা হবে। তুমি তোমার এলাকায় আগে তৃণমূলকে হারাও। জটিলতা তৈরি করে দাও। ততদিন তোমার বিরুদ্ধে এজেন্সি দিয়ে বড় কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। নেপথ্যে থেকে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির রেজাল্ট যদি ভাল করতে পারো, তবেই তোমায় নেওয়া হবে। রেজাল্ট ভাল দিতে না পারলে পদ্মে নেওয়া হবে না। দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এমনই স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে বিজেপিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক নেতাদের উদ্দেশে।
আদি-তৎকাল বিজেপি, বিজেপিতে (BJP) এসে আবার ফিরে যাওয়া, এগুলোতে খানিকটা বিরক্ত হয়েই এবার এই ফর্মুলা চালু করছে দিল্লি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ও দলের রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষকরা এটা বসে ঠিক করেছে। ইতিমধ্যেই এই ফর্মুলাটা দলের দু-একজন শীর্ষনেতাকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, প্রথমত, তোমরা যোগাযোগ করো। তোমরা বল কার কার কাছে সিবিআই বা ইডিকে পাঠাতে হবে। কারণ, সিবিআই-ইডি পাঠালেই সেই সব তৃণমূল নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তখন সেই নেতাদের বলা হবে, তোমরা এলাকায় তৃণমূলের অযোগ্যদের প্রার্থী করে দাও। গোষ্ঠীবাজি বাড়িয়ে দাও। আর তৃণমূলের কে কে টিকিট পাবে না সেগুলোকে বিজেপিতে দিয়ে দাও। মোদ্দা কথা তুমি ভিতর থেকে অন্তর্ঘাত করো। তার জন্য ‘যা যা দরকার তুমি পাবে’। এটাই বার্তা দেওয়া হবে যোগাযোগকারী তৃণমূল নেতাদেরকে। অর্থাৎ পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে টার্গেট করে এভাবেই এবার অন্তর্ঘাত প্যাকেজের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির তরফে তৃণমূল-সহ অন্য দলের নেতাদের বলা হচ্ছিল, এখনই চলে এসো। আর পঞ্চায়েতে বিজেপির ব্লু-প্রিন্ট হচ্ছে, তৃণমূলের ভিতরে থেকে সেই দলকে ডোবাও। সেই কাজ করতে পারলে তবেই বিজেপিতে আসতে চাওয়া সংশ্লিষ্ট তৃণমূল নেতাকে নেওয়া হবে।
দ্বিতীয়ত, যোগাযোগকারী তৃণমূল নেতাদের বলা হয়েছে কিংবা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে, তাদের বিজেপির তরফে বলা হবে, এমনভাবে গোষ্ঠীবাজি করাতে হবে যাতে অযোগ্য প্রার্থীরা টিকিট পায়। আর যোগ্যরা বঞ্চিত হয়। তখন তৃণমূলের সেই যোগ্যদের বিজেপি থেকে টিকিট দেওয়া হবে। তাদের নাম, ফোন নম্বরও এখন থেকে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব চেয়ে নিচ্ছে। কারণ, বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে যে, সাধারণভাবে তৃণমূলকে হারানো যাবে না। এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমুখী প্রকল্পগুলি হচ্ছে পথের কাঁটা। ফলে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা চাইছে, এখন থেকে টার্গেট করে বিধায়ক ধরে, জেলা ধরে যারা তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। আর কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে সিবিআই-ইডি দিয়ে কয়েকবার ডাক পাঠিয়ে বিজেপিমুখী করে তোলা। যাতে তারা বাঁচার জন্য বিজেপির দিকে আসবে। একই সঙ্গে তাদের বলা হবে, খারাপ লোকটাকে তৃণমূলে তুলে ধর, যাতে ভাল যে আছে সে বিক্ষুব্ধ হয়ে যায়। সেই বিক্ষুব্ধকে বিজেপি প্রার্থী করবে।
তৃতীয়ত, রাজ্যের দলের শীর্ষনেতাদের দিল্লির তরফে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু এলাকায় সিপিএম তথা বামেদের যতটা সম্ভব ছেড়ে দিতে হবে। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে বলা হবে, সংখ্যালঘু এলাকায় ভোট কেটে নষ্ট করো না। ওখানে এমন ভাব দেখাতে হবে যেন বিজেপিকে প্রার্থী দিতে দেওয়া হল না। আসল কৌশল হচ্ছে, প্রার্থী না দেওয়া যাতে বিরোধী ভোট, সংখ্যালঘু ভোট সিপিএমে যায়। এই সংখ্যালঘু এলাকায় বিজেপি প্রার্থী খুঁজে পাবে না। তাই সিপিএমকে যেন বিরক্ত করা না হয়। জেলাভিত্তিক প্রাথমিক রিপোর্ট কী আছে সেটা রাজ্য বিজেপির কাছ থেকে চেয়েছে দিল্লি। এই গাইডলাইনের উপর দাঁড়িয়েই প্রাথমিক রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.