Advertisement
Advertisement
বিজেপি

প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ কর্মীদের, সামাল দিতে জরুরি বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্ব

জেলা ও রাজ্যের পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা৷

BJP rushes to address dissent after candidate declaration
Published by: Tanujit Das
  • Posted:March 23, 2019 9:11 am
  • Updated:March 23, 2019 10:43 am

রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: লোকসভা নির্বাচনের প্রথম প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পরেই কোন্দল মাথাচাড়া দিয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে৷ প্রার্থী বাছাই নিয়ে কর্মীদের অসন্তোষের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়৷ যা প্রশমনে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বকে৷ এহেন অবস্থায় কর্মীদের শান্ত করতে শনিবার কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির অডিটোরিয়ামে জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷ সূত্রের খবর, সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে সমস্ত জেলার সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের৷ থাকবেন রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও৷

[শহরে রাজনৈতিক অশান্তি, টালিগঞ্জে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে আহত ২ ]

Advertisement

জানা গিয়েছে, উক্ত বৈঠকে প্রতিটি জেলার প্রতিনিধিদের থেকে প্রার্থী সম্পর্কে তাঁদের অভিযোগ শোনা হবে৷ দল কেন ওই ব্যক্তিকে টিকিট দিয়েছে, তা জেলা প্রতিনিধিদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হতে পারে৷ অবশেষে তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত৷ দল কোনও প্রার্থী বদল করবে না৷ শুক্রবারই যার খানিকটা ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ তিনি জানান, “অনেকে দলে নতুন এসেছেন। তাঁদের নিয়ে একটু সমস্যা হতেই পারে। এখন দল অনেক বড় হয়েছে। অনেকে প্রার্থী হতে চান। তিন-চারশো আবেদন জমা পড়েছিল। সেখান থেকে বেছে নিতে হয়েছে। কার্যকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তাঁদের বুঝিয়ে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। তবে পার্টি যাঁদের প্রার্থী করেছে, সেই সিদ্ধান্ত সকলকেই মানতে হবে। নাহলে বিজেপিতে লোকের অভাব নেই৷’’

বৃহস্পতিবার প্রার্থী ঘোষণার পরেই ঝামেলা শুরু হয় কোচবিহারে৷ সেখানে জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন কর্মীরা৷ কারণ ওই কেন্দ্রে বিজেপির তরফে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূল ছেড়ে সদ্য গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়া নিশীথ প্রামাণিককে৷ কিন্তু তাঁকে প্রার্থী মানতে নারাজ জেলা বিজেপির কর্মীরা৷ তাঁরা দাবি করেন, কোচবিহার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করতে হবে জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মনকে৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন জেলা বিজেপির কর্মীরা৷ গণ-ইস্তফারও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা৷ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েদেন, দীপক বর্মনও প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেবেন৷ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, তা সামাল দিতে মাঠে নামতে হয়েছে বিজেপির নেতা তথা রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননকে৷ কোচবিহারের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেন তিনি৷

[‘নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই’, ফেসবুকে বিস্ফোরক প্রাক্তন বিজেপি নেতা]

এছাড়া, বৃহস্পতিবার রাতেই দলের রাজ্য সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজকমল পাঠক৷ প্রার্থী বাছাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভের জেরেই ইস্তফা বলে জানান তিনি৷ সূত্রের খবর, শ্রীরামপুর অথবা হুগলিতে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন রাজকমল পাঠক৷ কিন্তু হুগলি থেকে লোকসভার টিকিট পেয়েছেন রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ এবং শ্রীরামপুর থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি দেবজিৎ সরকার৷ সেই ক্ষোভেই ইস্তফা দেন তিনি৷ এছাড়া, তমলুক ও কৃষ্ণনগরেরও প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে চরমে পৌঁছেছে অসন্তোষ। তমলুকে কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে সিদ্ধার্থ নস্করকে। কিন্তু সেখানকার নেতাদের বক্তব্য, সিদ্ধার্থবাবুকে তাঁরা কেউ চেনেন না। দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদীপকুমার দাসের বক্তব্য, ‘‘প্রার্থীর নাম পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করব। তমলুকে দলের নেতা, কর্মীরা বহিরাগত প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছে না’’। একই অবস্থা কৃষ্ণনগরেও৷ সেখানে বিজেপির তরফে প্রার্থী করা হয়েছে প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবেকে৷ যা সেখানে দলের বড় অংশই নাকি মেনে নিতে পারছে না। তাঁদের দাবি, প্রার্থী করতে হবে ভূমিপুত্র সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়কে৷ কেন তাঁকে প্রার্থী করা হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছে নদিয়া জেলা বিজেপির একটা বড় অংশই।

[মাসুদ ইস্যুতে বিশ্বমঞ্চে মুখ পুড়েছে চিনের, মন্তব্য প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধানের]

বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। বহিরাগত সায়ন্তনকে কেন প্রার্থী করা হল তা নিয়ে জেলা বিজেপির একাংশ পোস্টারও দিয়েছে এলাকায়। রাজ্যে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় গতবারের মতো এবার কোনও তারকার চমক নেই। তালিকায় রাজনৈতিক মুখেই বেশি আস্থা রেখেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। একদিকে প্রার্থী করে সংগঠনের নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জায়গা দেওয়া হয়েছে সংঘ ঘনিষ্ঠদের। তালিকায় পুরনো ও নতুনদের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা হয়েছে। বেশ কিছু আসনে আবার চিকিৎসক, অধ্যাপকদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুরে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, উত্তর কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা, আসানসোলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দমদমে প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য, দক্ষিন কলকাতায় রাজ্য সহ-সভাপতি ও নেতাজি পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার বোস, হুগলিতে মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রার্থী হিসাবে রয়েছে। তেমনই আবার তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে আসা অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরাদেরও প্রার্থী করা হয়েছে। মালদহ উত্তরে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএম থেকে আসা বিধায়ক খগেন মুর্মুও। প্রার্থী হয়েছেন দলের রাজ্যের দুই সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ও দেবশ্রী চৌধুরি। প্রার্থী হয়েছেন যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারও। প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষকে ঘাটালে ও প্রাক্তন আমলা পরেশচন্দ্র দাসকে বর্ধমান পূর্ব আসনে প্রার্থী করা হয়েছে।

[‘সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’, প্রার্থীতালিকা নিয়ে বিক্ষোভে জল ঢালার চেষ্টা দিলীপের ]

আবার বিজেপিতে সক্রিয়ভাবে নেই, কিন্তু এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন বেশ কয়েকজন সংঘ ঘনিষ্ঠকে প্রার্থী করা হয়েছে। যেমন বালুরঘাটে প্রার্থী করা হয়েছে সুকান্ত মজুমদারকে। তিনি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বারাসতে প্রার্থী হয়েছেন চিকিৎসক মৃণালকান্তি দেবনাথ। আবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ জয়ন্ত রায় প্রার্থী হয়েছেন জলপাইগুড়িতে। বাংলায় প্রার্থী ঠিক করতে শুধুমাত্র রাজ্য বিজেপির পাঠানো তালিকার উপরই ভরসা রাখেনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পেশাদার সংস্থাকে দিয়েও সমীক্ষা করানো হয়েছে। অমিত শাহ নিজেই এই সমীক্ষা করিয়েছিলেন। জিততে সক্ষম এরকম প্রার্থীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন বীরভূমে দুধকুমার মণ্ডলকে প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই। বীরভূমে যে ধরনের রাজনীতি হয় সেখানে দুধকুমারের মতো কড়া ধাতের নেতাই উপযুক্ত বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় নেতারা। বীরভূমে বিজেপির শক্তিশালী সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে দুধকুমার মণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দার্জিলিংয়ের প্রার্থী এস এস আলুওয়ালিয়া হবেন কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। একইভাবে বনগাঁয় শান্তনু ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ কাউকে না কি সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া দুলাল বরকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী নির্বাচনের গোটা বিষয়টাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তাঁরাই নেবেন।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement