রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: নিজেদের অস্বস্তি ঢাকতে এবার দিলীপ ঘোষের মুখে লাগাম পরাল বিজেপি (BJP)। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে একপ্রকার নিষেধ করে দেওয়া হল। দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সাফ বলে দেওয়া হল, “আপনার আলটপকা মন্তব্যে ক্ষতি হচ্ছে দলের। এর আগে বারবার আপনাকে সংযত হতে বলা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। তাই আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে পরিস্থিতি বুঝুন। আপাতত সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা থেকে বিরত থাকুন।”
দিলীপ ঘোষ বরাবরই স্পষ্টবাদী। মারমার, কাটকাট কথা বলার জন্য তাঁর যথেষ্ট দুর্নামও রয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতির পদ খোয়ানোর পর থেকে তিনি যে শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেই আক্রমণ করছেন, তা নয়। অনেকক্ষেত্রে তাঁর নিশানায় থাকছে দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। কখনও সুকান্ত মজুমদারকে (Sukanta Majumdar) তিনি অনভিজ্ঞ বলেছেন, আবার কখনও শুভেন্দু অধিকারীকে বলছেন মেদিনীপুরের নেতা। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, এভাবে বারবার মুখ খুলে দিলীপবাবু দলের রাজ্য সংগঠনের যেমন ক্ষতি করছেন, তেমনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও অস্বস্তিতে ফেলছে। সদ্যই এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকার বিজেপি নেতৃত্বকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছে। যার জেরে এবার সোজা দিলীপকে সেন্সর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেপি নাড্ডা (JP Nadda)। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে নাড্ডার কাছে নির্দেশিকাও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চিঠিতে বলা হয়েছে, “আপনার বেশ কিছু কথাবার্তা দলের রাজ্য নেতৃত্বের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্বের অস্বস্তিও বাড়াচ্ছে। এর আগেও এ নিয়ে বারবার আপনাকে সতর্ক করা হয়েছিল। আমাদের আশা ছিল, আপনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন। কিন্তু সদ্য এক সাক্ষাৎকারে করা আপনার বেশ কিছু মন্তব্য শুধু দলের কর্মীদের আঘাত দিয়েছে তাই নয়। দলের ক্ষতিও করেছে। তাই আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে সবসময় সংবাদমাধ্যম বা জনসমক্ষে এই ধরনের মন্তব্য করবেন না।” অর্থাৎ স্পষ্টবাদী দিলীপের (Dilip Ghosh) মুখে একপ্রকার লাগাম লাগানোর চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই ‘অপমানজনক’ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে সমবেদনা জানিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেছেন, দিলীপ ঘোষের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু এভাবে দলবদলুরা গিয়ে দিলীপদার মতো পুরনো লোককে কোণঠাসা করে দেবে সেটা হয় নাকি কখনও। কখনও বাংলা থেকে বের করে নেওয়ার চেষ্টা করবে। কখনও দিল্লি থেকে ঠিক করে দেবে, কে কী বলবে সেটা হবে নাকি। আমি দিলীপদাকে বলব, এই নির্দেশিকা মানবেন না। বিরোধিতা করুন। যাদের মাটির সঙ্গে যোগ নেই, তাঁরা দিল্লিতে বসে ঠিক করবে, কে বাংলায় কী বলবে, সেটা হয় না। দিলীপদাকে বলব আপনি আগে যেমন দলে মাথা উঁচু করে চলতেন, তেমনভাবেই চলুন।” কুণাল ঘোষের এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে নয়া জল্পনা তৈরি হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.