রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: নাগরিকত্ব বিলকে সামনে রেখে বনগাঁর ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে সভা করানোর ভাবনা রাজ্য বিজেপির। বুধবার রাজ্য বিজেপি দপ্তরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এই সভার বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি হচ্ছে সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসংঘের প্রধান কার্যালয়। কাজেই সেই ঠাকুরনগর কিংবা তার সংলগ্ন এলাকায় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভার পরিকল্পনার পিছনে মতুয়া ভোটই গেরুয়া শিবিরের লক্ষ্য। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নাগরিকত্ব বিলকে প্রচারে এনে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের ১ কোটি উদ্বাস্তু ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে চাইছে বিজেপি। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁয় যদি প্রধানমন্ত্রীর সভা হয়, তাহলে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতেই বিজেপির তরফে একটা বিরাট বার্তা যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিরোধীদের আপত্তি খারিজ করে লোকসভায় ধ্বনিভোটে পাস হয়েছে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল। তারপরই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে হাতিয়ার করতে নেমে পড়তে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান–এই তিন দেশ থেকে আগত অমুসলিম শরনার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত এই বিল। আর বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরনার্থীদের বড় অংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের। বনগাঁ, বসিরহাট, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট ও দমদম লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের একটা বড় অংশই মতুয়া। দলীয় সূত্রে খবর, বুধবার রাজ্য বিজেপির দপ্তরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে জোরদার প্রচার করতে হবে বাংলায়। সেখানেই ঠাকুরনগরে নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে সভা করানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজেপি নেতৃত্ব চাইছে, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বনগাঁর সভা থেকেই বার্তা দিক প্রধানমন্ত্রী। যদিও এই সভার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে থেকে কোনও কনফার্মেশন এখনও আসেনি। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা জানান, “আমরা ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভা করাতে চাইছি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মারফত সভার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।” রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “নাগরিকত্ব বিলের ফলে পশ্চিমবঙ্গের ১ কোটি উদ্বাস্তুর সুবিধা হবে। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীরা নাগরিকত্বের সম্মান পাবেন।” ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রীর সভার যে পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি তাকে অবশ্য আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, “ঠাকুরনগরে যদি সভা করে তাহলে বড়মা-র অনুমতি নিতে হবে। জোর করে ওরা (বিজেপি) সভা করতেই পারে। তবে মতুয়া ভোট ওদের (বিজেপির) সঙ্গে নেই।”
[সোয়াইন ফ্লু’তে আক্রান্ত অমিত শাহ, অনিশ্চিত রাজ্য বিজেপির কর্মসূচি]
ক’দিন আগেই ঠাকুরনগরে বড়মা বীনাপানিদেবীর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করে মতুয়া মহাসংঘ। ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বড়মাকে বঙ্গবিভূষন সম্মাননা প্রদান করা হয়। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ঠাকুরনগরে মুখ্যমন্ত্রীর পালটা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভা করিয়ে মতুয়াদের মন জয় করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। গেরুয়া শিবিরের দাবি, মতুয়া ভোট ব্যাঙ্কে বিজেপির একটা ভাল প্রভাব রয়েছে। যদিও শাসকদল বলছে, এসবে কোনও লাভ হবে না। এনআরসির পর সব মতুয়া ভোট এখন তাদের দিকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.