স্টাফ রিপোর্টার: ইস্যু, সরস্বতী পুজোয় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের হাতেখড়ি নিয়ে বাংলা শেখার ইচ্ছাপ্রকাশ। যা নিয়ে আড়াআড়ি দু’ভাগে বিভক্ত রাজ্য বিজেপি। একভাগ, শুভেন্দু অধিকারী-স্বপন দাশগুপ্তরা ‘রাজনৈতিক স্টান্ট’ বলে নজিরবিহীন আক্রমণ করেছেন রাজ্যপালকে। অন্যদিকে উলটো অবস্থানে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু-স্বপনদের ‘রাজভবন নির্ভর রাজনীতি’ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুভেন্দু-স্বপনদের উদ্দেশ্য করে বিজেপি প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপের পরামর্শ, ‘রাজভবনের মুখ চেয়ে রাজনীতি করার অভ্যাস বন্ধ করুন।’ আর বিজেপির রাজ্যপালকে আক্রমণ নিয়ে মুখর তৃণমূল কংগ্রেস। এনিয়ে তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় তীব্র কটাক্ষ করা হয়েছে বিজেপিকে।
এ প্রসঙ্গে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) তোপ, ‘‘বিজেপি বাংলার শত্রু, বাংলা ভাষার শত্রু। রাজ্যপাল বাংলা ভাষাকে ভালবাসছেন দেখে ওদের গা জ্বলছে। বাংলা ভাষার ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে রাজ্যপাল যদি বাংলা শিখতে চান তবে তাঁকে তো উৎসাহিত করা উচিত! তা না করে উলটে বাংলা শেখার বিরোধিতা করছে বঙ্গ বিজেপি। ওরা বাংলা তথা বাঙালির কলঙ্ক।’’ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, রাজভবন তথা রাজ্যপালের উপর চাপ বাড়াতে বঙ্গ বিজেপিকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এমন নির্লজ্জ আক্রমণ করাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ওরা ভয় দেখাচ্ছে, বিজেপির একাংশকে দিয়ে চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। জগদীপ ধনকড়ের মতো পার্টির লোকের আচরণ করা রাজ্যপালের ভূমিকা দেখে ওদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ওরা চাইছে রাজভবন ফের বিজেপির পার্টি অফিস হয়ে যাক।’’ এখনও পর্যন্ত রাজ্যপাল নিরপেক্ষ আছেন মন্তব্য করে কুণাল বলেন, বিজেপিতে যারা সুস্থ সংস্কৃতি ও ভাবনার পথে আছেন, তাঁদের স্বপন দাশগুপ্তর বিরোধিতা করা উচিত।
বিতর্কের সূত্রপাত সি ভি আনন্দ বোসের বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা নিয়ে। বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে শপথ নেওয়ার আগেই কেরলের মানুষ ,প্রাক্তন আমলা আনন্দ বোস ঘোষণা করেছিলেন, তিনি শিক্ষক রেখে বাংলা শিখতে চান। ঠিক হয় আগামী ২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পুজোর দিন রাজভবনে সাধারণতন্ত্র দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানের ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হাতে রাজ্যপালের হাতেখড়ি হবে। যা জেনে ক্ষিপ্ত হয় রাজ্য বিজেপির শুভেন্দু-লবি। তাঁদের ক্ষোভের কারণ, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের মধ্যে সৌজন্যে আবহ তৈরি হওয়া নিয়ে। মঙ্গলবার বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে এজন্য রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিজেপি নেতা প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘সরস্বতী পুজোর সময় অনেকে হাতেখড়ি দেন। রাজ্যপাল বাংলা শিখতে চাইছেন, ভাল! কিন্তু ব্যাপারটা এতটা সাদামাটা নয়। একটা রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। এই হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে যেন বোঝানো হচ্ছে বাংলায় সব কিছু ঠিক আছে। এটা একটা স্টান্ট। এর মধ্যে রাজ্যপালের আসা উচিত নয়।”
রাজ্য বিজেপির অন্দরমহলে স্বপন দাশগুপ্ত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘অতি ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। এদিন রাজ্যপালকে আক্রমণ করার সময় তাঁর সেই ‘শুভেন্দু প্রীতি’-র প্রকাশও ঘটেছে এদিন। তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদটিও সাংবিধানিক। রাজভবনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে পিছনের আসন দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে ডেকে অপমান করা হচ্ছে। শপথের দিন শুভেন্দুকে পিছনের সারিতে আসন দেওয়া হয়েছিল। আর রাজ্যপাল কিছু বলছেন না। এটা চলতে পারে না।’’ রাজ্যপালের উদ্দেশে তোপ দেগে প্রাক্তন বিজেপি রাজ্যসভা সদস্যের অভিযোগ, ‘‘উনি ‘পেনশনার্স প্যারাডাইস’ বা অবসরের স্বর্গরাজ্য হিসাবে এখানে আসেননি। ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি দেখতে আগে এসেছিলেন। সেই পরিস্থিতি এখনও আছে। সেসব ভুলে অনেক বেশি যেন ‘প্লে অ্যাক্টিং’ হচ্ছে। সাংবিধানিক গণ্ডি পার করছেন রাজ্যপাল।’’ তাঁর কথায়, এর আগে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে উনি এসেছিলেন। সেই পরিস্থিতি এখনও রয়েছে। অথচ সে সব ভুলে অনেক বেশি যেন প্লে অ্যাক্টিং হচ্ছে। তাঁর লেখা বই সরকার অনুবাদ করবে, বইমেলায় বেরোবে। এ সব আদিখ্যেতার থেকে বড় ঘটনা বাংলায় ঘটছে। এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের প্রসঙ্গ টেনেছেন স্বপন। তাঁর বক্তব্য, সবাই ধনকড় হতে পারেন না।
তবে শুভেন্দু অধিকারী-স্বপন দাশগুপ্তদের রাজ্যপাল নিয়ে এই অবস্থানের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে উলটো কথা শোনা গিয়েছে দিলীপ ঘোষের মুখে। এ প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজভবন কীভাবে চলছে, রাজ্যপালের ভূমিকা কেমন, এসব দেখা আমার কাজ নয়। আমি কোনওদিনই রাজভবনের দিকে চেয়ে রাজনীতি করি না। বাকিদেরও বলব, রাজভবন নির্ভরতা কমাতে।’’ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে টিভি চ্যানেলে স্বপনের সরাসরি অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ বলেন, “আমার তেমন কিছু মনে হয়নি। তবে আমি এটা বলব যে, রাজভবন সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয়।” এদিকে নেতাজির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকার পরদিনই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে মমতা ও তৃণমূলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি তথা নেতাজি পরিবারের অন্যতম সদস্য চন্দ্র বসু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.