স্টাফ রিপোর্টার: বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। দলে মতুয়া বিদ্রোহ, উদ্বাস্তু সেলের তোপের পর এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ, দুই গোষ্ঠীর কোন্দল। দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দিল্লিতে নালিশ করেছেন সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারীরা। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে। পালটা অবশ্য বসে নেই দিলীপ শিবির। তাঁদের দাবি, দিলীপ ঘোষই হচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির সবচেয়ে সফল সভাপতি। লোকসভায় দারুণ ফল দিলীপ ঘোষের সময়েই। বঙ্গ বিজেপিও ৭৭ জন বিধায়ক পেয়েছে তাঁরই সভাপতিত্বে। এখন যাঁরা নেতৃত্বে তাঁরা দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। দিলীপ ঘোষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চলছে।
রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীরা নতুন রাজ্য কমিটি গঠন ও জেলা সভাপতিদের বদল করার পর থেকেই বঙ্গ বিজেপিতে বিদ্রোহ চরমে। দিলীপ ঘোষ সভাপতি থাকাকালীন বহু পুরনো নেতা যাঁরা দলের দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন, জমানা বদলের পর সুকান্ত-অমিতাভরা নতুন কমিটি থেকে তাঁদের বাদ দিয়েছেন। রাজ্য কমিটি তো বটেই, অধিকাংশ জেলার সভাপতি পদ থেকে দিলীপের লোকজনকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে বলেই অভিযোগ। দিলীপ শিবিরের বক্তব্য, এই টিম নিয়েই ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্য এসেছিল বাংলায়। তার পরও সেই টিমকে আমূল বদলে ফেলে নিজের মতো কমিটি সাজিয়েছেন অমিত মালব্য, অমিতাভ চক্রবর্তীরা। এই দুই নেতার বিরুদ্ধে ফুঁসছেন বাদপড়া নেতারা। শুধু তাই নয়, অমিত মালব্য ও অমিতাভ চক্রবর্তীকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
এরই মাঝে একাধিক বিধায়কের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের ক্ষোভ ও বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে শান্তনুর লাগাতার যোগাযোগ ও গত রবিবার একত্রে বৈঠক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এরই মধ্যে দলের অন্দরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অভিযোগ দিলীপ শিবিরের বিরুদ্ধে। বিদ্রোহীদের নাকি মদত দিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। এই মর্মে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দিলীপ শিবিরের বিরুদ্ধে সুকান্ত-শুভেন্দুরা অভিযোগ করেছেন বলে খবর। সম্প্রতি বিক্ষুব্ধদের সম্পর্কে নরম মনোভাব ফুটে উঠেছে দিলীপবাবুর একাধিক মন্তব্যে। এমনই বক্তব্য ক্ষমতাসীন শিবিরের। পুরনো বাদপড়া নেতারা দলে কোনও দায়িত্ব পাননি, সেটাও একটা সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন দিলীপ ঘোষ।
আবার শান্তনু ঠাকুর-সহ বিক্ষুব্ধ নেতাদের বৈঠক নিয়েও কোনও অন্যায় দেখেননি দিলীপবাবু। তাঁর কথায়, আলোচনা কেউ করতেই পারেন। এর মধ্যে কোনও দোষের দেখছি না। আবার বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতা সায়ন্তন বসুকে সোমবার সল্টলেকে পুরভোটের প্রচারে দিলীপ ঘোষের সঙ্গেই দেখা গিয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবার বিক্ষুব্ধ অংশের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, “দলের অন্দরে কোনও সমস্যা তৈরি হলে সেটা ভিতরে মিটিয়ে নেওয়া ভাল। সেই সুযোগও রয়েছে।” রবিবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের গাইঘাটার বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, প্রাক্তন সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তেওয়ারি, রাজ্য নেতা সমীরণ সাহা। বিক্ষুব্ধদের প্রতি দিলীপ ঘোষের এই নরম মনোভাব নিয়ে অসন্তুষ্ট রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। এমনটাই খবর দলীয় সূত্রে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.