অর্ণব আইচ: রেজিস্ট্রি করে বিয়ের দু’সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই বধূ অত্যাচারের অভিযোগ। নববধূ অভিযোগ তুললেন তাঁর স্বামী বিজেপির বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর বিরুদ্ধে। নববধূ স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরীর অভিযোগ, রেজিস্ট্রি করে বিয়ের একদিনের মধ্যেই শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হয়, বিজেপি বিধায়ক স্বামী তাঁর সঙ্গে আর সংসার করতে রাজি নন। কারণ হিসাবে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে জানান, পেশায় চিকিৎসক বিজেপির বিধায়ক জানতেন না যে, স্বস্তিকার পরিবার আসলে কংগ্রেসী ও স্বস্তিকার মা লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন।
যদিও নববধূ স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী তাঁর স্বামীর এই দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি পূর্ব কলকাতার তিলজলা থানায় স্বামী ও পরিবারের লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই বধূ অত্যাচার, পণ চাওয়া, তোলাবাজি, বিশ্বাসভঙ্গ, হুমকি, হেনস্তা, ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের হয়। তারই জেরে তিলজলা থানার পক্ষে নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে তলব করা হয়েছে। যদিও একাধিকবার তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারিণী স্বস্তিকা তিলজলা এলাকার একটি অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা। ওই আবাসনের কর্মকর্তাও তিনি। স্বস্তিকা জানান, তিনি বিদেশে ঘুরতে ভালবাসেন। গত বছরের জুলাইয়ে তিনি নরওয়ে, সুইডেনে যান। বিদেশে থাকাকালীন তোলা তাঁর ছবি এক বন্ধুর মাধ্যমে পৌঁছয় মুকুটমণির কাছে। তখনই মুকুটমণি তাঁকে পছন্দ করেন। ফোনে দু’জনের মধ্যে যোগাযোগও হয়। চার মাস পর দুই পরিবারের মধ্যে কথা হয়। গত বছরের ২৪ নভেম্বর মুকুটমণি ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা স্বস্তিকাদের বাড়িতে আসেন। তখনই বিধায়ক জানিয়ে দেন যে, তিনি স্বস্তিকাকেই বিয়ে করবেন। এর পর তাঁদের মধ্যে কথাও হত। বিশেষ করে যেদিন রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়, সেদিন এই বিষয়টি নিয়েই দীর্ঘসময়ের জন্য দু’জনের মধ্যে ফোনে আলোচনা হয়।
গত ১৫ মে স্বস্তিকা একাই ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে বেড়াতে যান। ২৭ মে ফিরে আসেন। বিদেশ ভ্রমণ চলাকালীন দু’জনের মধ্যে বহু চ্যাটও হয়। গত ২৮ মে স্বস্তিকাদের ফ্ল্যাটেই স্বস্তিকা ও মুকুটমণির রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়। ওই ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মুকুটমণির মা, বাবা, দিদি, জামাইবাবু, ভাই ও স্বস্তিকার মা উপস্থিত ছিলেন। দু’জনে বৈবাহিক সম্পর্কে প্রতিজ্ঞাবদ্ধও হন। ৩১ মে স্বস্তিকা ওই বিয়ের শংসাপত্রের কপিও জোগাড় করেন। কিন্তু স্বস্তিকার অভিযোগ, বিয়ের পরের দিনই ২৯ মে মুকুটমণির ভাই তাঁকে ফোন করে বলেন, মুকুটমণি স্বস্তিকার সঙ্গে আর সংসার করতে রাজি নন। তিনি ডিভোর্স চান। কারণ রেজিস্ট্রি করে বিয়ের পর আইনত তাঁরা স্বামী-স্ত্রী।
এই বিয়ে ও ডিভোর্স চাওয়ার ব্যাপারটি যেন স্বস্তিকা বাইরের কাউকে না জানান, সেই ব্যাপারেও তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। কারণ হিসাবে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিজেপির বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী জানতেন না যে, স্বস্তিকার মা সোমা রাণীশ্রী রায় কংগ্রেসের নেত্রী। তিনি ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। মূলত সেই কারণেই তিনি স্বস্তিকাকে ছেড়ে দিতে চান। অথচ স্বস্তিকার দাবি, তিনি যে কংগ্রেসী পরিবারের মেয়ে, তা জেনেশুনেই মুকুটমণি বিয়ে করেছিলেন। এই বিষয়ে তাঁদের বহুবার আলোচনা হয়েছে। এমনকী, রাহুল গান্ধী স্বস্তিকার ‘প্রিয় নেতা’ বলেও মুকুটমণি তাঁর সঙ্গে মজা করেছেন। স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরীর দাবি, স্বামী তাঁকে ডিভোর্স দেবেন, তা তিনি মেনে নিতে পারেননি বলেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। অভিযুক্তদের জেরা করে এই ব্যাপারে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.