রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: নিচু তলায় সংগঠনের বেহাল অবস্থা। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বহু আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়া সম্ভব নয় তা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার (J P Nadda) কাছে কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আর যেখানে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারবে না সেখানে তৃণমূলকে আটকাতে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে অঘোষিত জোট করতে চলেছে বিজেপি। সমবায় ফরম্যাটে নিচু তলার জোটে উপরতলার ও অনুমোদন এদিন কার্যত আদায় করে রাখলেন সুকান্তরা। এমনই খবর গেরুয়া শিবির সূত্রে।
শনিবার রাতে কলকাতায় নিউটাউনের এক হোটেলে নাড্ডার উপস্থিতিতে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে এই অঘোষিত জোটের বিষয়টিও অনুমোদন করে নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বৈঠক শেষে বলেন, “বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব জায়গাতে প্রার্থী দেব। যেখানে দেব না সেখানে কেন দেব না সেটা পরে বুঝতে পারবেন।” সুকান্তর এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, যেখানে বামেরা শক্তিশালী সেখানে প্রার্থী দেবে না বিজেপি (BJP)। অর্থাৎ, রাম-বাম আঁতাত পঞ্চায়েত ভোটেও যে থাকবে সেটা এদিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, বুথ কমিটি না হওয়া নিয়ে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নাড্ডা। এদিন কোর কমিটির বৈঠকে হাতেগোনা কয়েকজন ছিলেন। সুকান্ত, লকেট, অমিত মালব্য, মঙ্গল পান্ডে, জ্যোতির্ময় মাহাতো-সহ আরও কয়েকজন থাকলেও ছিলেন না দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী। বীরভূমে শুভেন্দুর সভা দুপুরে হয়ে গেলেও রাতে কোর কমিটির বৈঠকে শুভেন্দু আসেননি। আর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, আজ অর্থাৎ রবিবার কাঁথি লোকসভায় জে পি নাড্ডার সভায় উপস্থিত থাকবেন না শুভেন্দু। সুকান্ত জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে যাচ্ছেন শুভেন্দু। তাই থাকবেন না। গেরুয়া শিবিরে প্রশ্ন, কাঁথিতে নাড্ডা আসছেন তখন শুভেন্দু কেন সেখানে থাকছেন না। ত্রিপুরায় প্রচার তো একদিন পরে গেলেও হত। তবে দলের অন্য একটি সূত্র বলছে, বাংলায় দুর্বল লোকসভা আসনগুলিতে সভা করছেন নাড্ডা-শাহরা। সেক্ষেত্রে শুভেন্দু হম্বিতম্বি করেন যে লোকসভা নিয়ে সেখানে ভাল ফল নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিজেপির। কাঁথি লোকসভার পরিস্থিতি যে বিজেপির অনুকূলে নেই সেই অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা রিপোর্ট দিল্লির কাছে গিয়েছে। তাই বিভিন্ন সময়ে দিল্লিকে ভুল রিপোর্ট দেওয়া শুভেন্দুর উপর ভরসা করতে না পেরেই আজ কাঁথিতেও সভা করছেন নাড্ডা, সুকান্তরা। এতে শুভেন্দু ও তার শিবির খুব একটা খুশি নয় বলেই জানা গিয়েছে।
এক মাসের ব্যবধানে শনিবার সন্ধেয় ফের রাজ্যে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। রবিবার রাজ্যে দু’জায়গায় জনসভা করবেন তিনি। প্রথম সভাটি হবে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের কাটোয়ায়। দ্বিতীয় সভাটি হবে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে। জনসভার পাশাপাশি কাটোয়া ও কাঁথিতে মণ্ডলস্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন নাড্ডা। সেই বৈঠকে দলের নিচুতলার পরিস্থিতি, বিশেষ করে বুথ পর্যন্ত কমিটি গঠনের কাজ কতটা এগিয়েছে, তা নিয়েই আলোচনা করবেন। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, দলের নিচুতলায় সাংগঠনিক অবস্থা খুব খারাপ। অধিকাংশ বুথে কমিটি গড়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নিচুতলায় ক্ষোভ—বিক্ষোভ—অভিযোগ রয়েছে।
রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের রিপোর্টে শুধু ভরসা না করে রাজ্যে এসে একেবারে নিচুতলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে জেলায় বৈঠকও করছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বঙ্গ বিজেপির পারফরম্যান্সে যে তিনি সন্তুষ্ট নন তা এদিন রাতের বৈঠকে কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। কারণ, দলে ক্ষোভ—বিক্ষোভ ও কোন্দলের পাশাপাশি সদ্য গেরুয়া শিবির ছেড়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। সেই বিষয়টিও রাতে দলের কোর কমিটির বৈঠকে আলোচনায় উঠেছে বলে খবর। শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট তার আগে নিচুতলায় বুথের সংগঠনের বেহাল অবস্থা নিয়ে কোনও ইতিবাচক উত্তর নাড্ডাকে দিতে পারেননি বঙ্গ নেতারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.