রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: তৃণমূল থেকে সব্যসাচীর প্রস্থান কি কেবল সময়ের অপেক্ষা? বঙ্গ রাজনীতিতে এটা যখন সবচেয়ে চর্চিত প্রশ্ন৷ যখন বিধাননগরের মেয়রকে সামাল দিতে কার্যত নাজেহাল অবস্থা শাসকদলের, ঠিক তখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি বাড়ালেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়৷ রবিবার সব্যসাচীর ভাগ্য নির্ধারণে যে বৈঠক ডেকেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব, সেই বৈঠক শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবারও বিধাননগরের মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন তিনি৷ জল্পনা বাড়িয়ে জানালেন, বিজেপি নেতা হিসাবে নয়, দাদা হিসাবে সব্যসাচীকে পরামর্শ দিতে গিয়েছেন৷ ‘কী পরামর্শ দিলেন?’ প্রশ্নে, মুখ খুলতে নারাজ কোনওপক্ষই৷ আর ‘দাদা-ভাই’ এর এই অদ্ভুত নীরবতাই এখন আরও ধন্দে ফেলেছে শাসক শিবিরকে৷
[ আরও পড়ুন: ‘মাথা নয়, কথা বলছে ওনার বয়স’, অমর্ত্য সেনকে কটাক্ষ বাবুল সুপ্রিয়র]
দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সব্যসাচীর বিরুদ্ধে রবিবার তৃণমূল ভবনে জরুরি বৈঠক ডাকেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ বিধাননগরের মেয়র বাদে যে বৈঠকে ডাক পান পুরনিগমের সমস্ত কাউন্সিলররা৷ সব্যসাচীর দায়িত্ব কমানোর পাশাপাশি, বৈঠকে শেষে তাঁর উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দেন ফিরহাদ৷ দলে থাকতে গেলে নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতেই হবে, সব্যসাচীর উদ্দেশে সেই বার্তা দেন তিনি৷ এমনকী, সব্যসাচীকে বিধাননগরের মেয়র পদে রাখলেও, তাঁর সমস্ত দায়িত্ব পালনের ভার দেওয়া হয় ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে৷ মেয়রের বিরুদ্ধে সমস্ত কাউন্সিলরদের যা যা অভিযোগ রয়েছে তা শোনেন ফিরহাদ হাকিম৷ জানান, এই রিপোর্ট তিনি তুলে দেবেন দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির হাতে৷ সেই কমিটিই সব্যসাচীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে৷ এক কথায়, রবিবার সব্যসাচীর ডানা ছেঁটে, তাঁকে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷
আর এরপরই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, যখন রাতে ‘ভাই’ সব্যসাচীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ‘দাদা’ মুকুল রায়৷ শাসকদলের বৈঠক শেষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সল্টলেকের বিএফ ব্লকের সুইমিং পুল অ্যাসোসিয়েশনে সাক্ষাৎ করেন তাঁরা৷ দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়৷ বৈঠক শেষে মুকুল রায় জানান, “দাদা হিসেবে পরামর্শ দিতে এসেছি। বিজেপি নেতা হিসেবে আসিনি।” সব্যসাচী কি বিজেপিতে যোগদান করবে? প্রশ্ন উড়িয়ে না দিয়ে, বরং মুকুল রায় এবার বলেন, ‘‘বিজেপিতে আসতে চেয়ে আগে আবেদন করুক! আগ্রহ প্রকাশ করুক। আবেদন এলে তবে এব্যাপারে মন্তব্য করব।” কেবল মুকুল রায়ই নন, এদিন দলের তরফে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দেন সব্যসাচীও৷ মুকুলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ক্লাবে অতিথি হিসেবে এসেছেন মুকুল রায়। যে কেউ আসতে পারেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে? উনি পরামর্শ দিলেন। তবে আপনারা বলছেন অপমান, দলের তরফে আমার কাছে বার্তা আসেনি। যতক্ষণ মেয়র আছি কাজ করব মানুষের জন্য৷’’
[ আরও পড়ুন: কাটমানি নেওয়া নেতাদের দলে নো-এন্ট্রি, রণকৌশল বৈঠকে হুঁশিয়ারি কৈলাসের ]
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের আগেও থেকেই সংবাদ শিরোনামে রয়েছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত৷ কখনও দোলের অনুষ্ঠানে গিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েছেন তিনি৷ কখনও বিজেপি নেতা তথা তাঁর রাজনৈতিক গুরু মুকুল রায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে লুচি-আলুর দম খেয়েছেন৷ কখনও লোকসভা নির্বাচনের পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন৷ দিন কয়েক আগে তৃণমূল সরকারেরই বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন তিনি৷ গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান বিধাননগরের মেয়র৷ যাতে অস্বস্তি বাড়ে তৃণমূল নেতৃত্বের৷ এরপরই সব্যসাচীর বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে শাসকদল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.