সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিতর্ক আর দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) যে হাত ধরাধরি করে হাঁটেন, এমন কথা নতুন নয়। এবার নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েও বিতর্ক উসকে দিলেন বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি। নববর্ষেও তিনি জুড়ে দিলেন হিন্দুত্বের ‘ট্যাগ’। গতকাল ফেসবুকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোস্ট করেন দিলীপ ঘোষ। সেই পোস্টে লেখা “সকলকে জানাই হিন্দু নববর্ষের শুভেচ্ছা”। আর বিজেপি নেতার এহেন বার্তাটি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শুভেচ্ছা বার্তার সঙ্গে একটি ভিডিও আপলোড করেছেন তিনি। তার বক্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কিন্তু দিলীপ ঘোষ জানিয়েছে, “আমি বিক্রম সংবৎ অনুসারে হিন্দু নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাইনি। সেই জন্যই বিক্রম সংবৎ অনুসারে হিন্দু নববর্ষের দিন ১৩ এপ্রিল পোস্ট করেছেন।” তবে অনেকেই হিন্দু নববর্ষকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বলে ভুল করেছেন।
মঙ্গলবার ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ভিডিও বার্তায় দিলীপ ঘোষকে বলতে শোনা গিয়েছে, “বিশ্বের সব চেয়ে প্রাচীনতম বিক্রম সংবৎ-এর দিন শুরু হচ্ছে। এটা ভারতবর্ষের গৌরব গরিমা, সংস্কৃতির পরিচায়ক। আমরাই বিশ্বের মধ্যে প্রথম সাল গণনা শুরু করেছিলাম। কলিযুগাব্দ এবং তার পর বিক্রম সংবৎ। এটি ভারতবর্ষের পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সৃষ্টির প্রথম দিন হিসাবে ধরা হয়। ভগবান রামের রাজ্যাভিষেক হয়েছে এই দিনে। তাই আজকের দিনটা আমাদের কাছে খুব গর্বের। আমরা সমস্ত ভারতবাসী এবং তথা বিশ্ববাসীকে একজন গর্বিত ভারতীয় হিসাবে হিন্দু নববর্ষের প্রথম দিনে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই….।”
আর এই ভিডিও বার্তা ঘিরেই পাক খাচ্ছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে পয়লা বৈশাখ কি সেই অর্থে কেবল মাত্র হিন্দুদের? আর এটাই কি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সাল গণনার হিসেব? বৈচিত্রে ভরা এই দেশে আঞ্চলিক পঞ্জিকা মতে এক দু’দিন আগে বা পরে শুরু হয় নববর্ষ উদযাপন। বাংলা পঞ্জিকা মতে পয়লা বৈশাখ এবার ১৫ এপ্রিল। কোনও কোনও রাজ্যে আবার ১৩ বা ১৪ এপ্রিল আঞ্চলিক নববর্ষ পালন শুরু হয়ে গিয়েছে। সৌর বছরের প্রথম দিন হিসাবে দেশের বাকি রাজ্য অসম, কেরল, মণিপুর, নেপাল, ওড়িশা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও ত্রিপুরাতেও নিজেদের নিয়মে পালিত হয় নববর্ষ। যা ভারতীয় সংস্কৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সঙ্গে সেই অর্থে ধর্মীয় যোগসূত্র খুঁজতে চাওয়াটা অনেকটাই আরোপিত। যদিও দিলীপ ঘোষ যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তার সঙ্গে বাংলা নববর্ষের পার্থক্য রয়েছে।
অসমিয়া নববর্ষ পরিচিত বোহাগ বিহু নামে। পঞ্জাবে পালিত হয় বৈশাখী ও তামিলনাড়ুতে পুঠান্ডু হিসেবে। কেরল ও কর্নাটকে বিশু নামে পালিত হয় নববর্ষ। ওড়িয়া নববর্ষ পণা সংক্রান্তি, তেমনই তেলেগু নববর্ষ উগাডি। প্রায় গোটা দেশের মতো এই রাজ্যগুলিতে হিন্দুরাই সংখ্যাগুরু। আর সেখানে নববর্ষের উদযাপনে হিন্দু-মুসলমান সবাই মেতে ওঠেন।
এছাড়া রয়েছে ‘ঘরের পাশে আরশিনগর’ বাংলাদেশ। সেখানে কার্যত জাতীয় উৎসবের মতো করে পালিত হয় নববর্ষ। অথচ সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশ হিন্দু রাষ্ট্র নয়। বরং তা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। সেই দেশে কিন্তু নববর্ষের এই উৎসবের সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের কোনও যোগই দেখেন না কেউ। গোটা দেশজুড়ে ‘পহেলা বৈশাখ’ পালিত হয় মহা সমারোহে। দিলীপ ঘোষের পোস্টের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, বিজেপি লাইন মেনেই কি সব কিছুর মতো নববর্ষের সঙ্গেও হিন্দুত্বের যোগসূত্র স্থাপন করতে চাইছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি? যদিও তিনি তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। একই সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, দিলীপ ঘোষের দাবি মতো বিক্রম সংবৎ কি সত্যিই প্রাচীনতম সাল গণনা ব্যবস্থা?
বিক্রম সংবৎ গ্রেগারিয়ান বর্ষপঞ্জি থেকে ৫৬.৭ বছর এগিয়ে রয়েছে। বিক্রমাদিত্য শকদের পরাজিত করে তাঁর বিজয়োপলক্ষ্যে ৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রবর্তন করেন চান্দ্র অব্দ বিক্রম সংবৎ। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায় যে উড়দি ইউয়াং প্রস্তর কাঠামোটি পাওয়া গিয়েছে সেটি ১১ হাজার বছরের বেশি পুরনো বলে দাবি করা হয়। অনেকেই আবার একে ২০ হাজারের বেশি পুরনো বলেও মনে করেন৷ স্কটল্যান্ডের ওয়ারেন ফিল্ডে প্রায় ১০ হাজার বছর প্রাচীন ১২টি গর্ত এবং একটি বাঁকা রেখা যুক্ত পাথুরে এলাকা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এই বিন্যাসকে চন্দ্র পঞ্জিকা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে এটিকে “বিশ্বের প্রাচীনতম ক্যালেন্ডার” নামেও অভিহিত করা হয়েছে ।
স্কটল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় খুঁজে পাওয়া এই ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাকে বিক্রম সংবৎ-এর থেকেও প্রাচীন ধরে নিলেও, প্রশ্ন উঠতে পারে এই ব্যবস্থা কি এখনও কার্যকর? একই ভাবে এ প্রশ্নও উঠবে বিক্রম সংবৎ সাল গণনা ব্যবস্থাও কি এখনও প্রচলিত রয়েছে? দিলীপ ঘোষ কি তা মেনে চলেন? তাই কী বাংলা নববর্ষের আগে আগে ভোটের মুখে হিন্দু নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন দিলীপ ঘোষ?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.