কৃষ্ণকুমার দাস: করোনা হাসপাতাল এম আর বাঙুর ও রাজারহাটের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের পরিষেবা নিয়ে বিজেপির অভিযোগ ও তৃণমূলের পালটা অভিযোগ ঘিরে ফের তপ্ত হল রাজ্য রাজনীতি। রাজ্যে কোয়ারেন্টাইনগুলির পরিস্থিতি খারাপ, সঠিকভাবে নজরদারির অভাবের কথা বার বার উঠে এসেছে মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্যে। তবে তার পালটা জবাব দিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে সাংসদ থেকে পদত্যাগ করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, “রাজারহাটে করোনার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে একই ঘরে একাধিক পরিবার রয়েছে। কোনও সুরক্ষা নেই। রোগীদের চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে না রাজ্যের করোনা হাসপাতালগুলিতে। বাঙ্গুরে ভর্তি রোগীদের ডাক্তাররা দেখছেন না, দেহ পড়ে থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা।” দিলীপের অভিযোগকে নস্যাৎ করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে তাঁকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বাঙ্গুর ও রাজারহাট নিয়ে পুরমন্ত্রীর দাবি, “ঘরে বসে মিথ্যার বেসাতি না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একবার বাঙুর বা রাজারহাটে চলুন। রাজনৈতিক স্বার্থে যে ভুয়ো অভিযোগ করছেন তাঁর অন্তত একটা প্রমাণ করুন। প্রমাণ করতে না পারলে সাংসদ থেকে এক্ষুনি পদত্যাগ করুন।” লকডাউনের মধ্যে হাসপাতাল যেতে দিলীপের যে অনুমতি (পাস) লাগবে তা জোগাড় করে দিয়ে নিজেই সঙ্গে যাবেন বলে ফিরহাদ চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।
রেশন নিয়ে দূর্নীর্তির পাশাপাশি এবার করোনা রুখতে মুখ্যমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে চেয়ারম্যান করে যে কমিটি করেছেন তা নিয়েও এদিন আক্রমণ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। তিনি অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রচারমুখী কাজ করছেন। করোনা মোকাবিলার নামে একমাস ধরে শুধু রাজনীতিই করেছেন তিনি। পরিস্থিতি সামলাতে কিছু সদর্থক ব্যবস্থা নেননি। যখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে, সামলাতে পারছেন না তখন কমিটি করে চারজন মন্ত্রী ও আমলাদের সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন। ম্যাচ হেরে যাচ্ছেন বলে ময়দান ছেড়ে পালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।” দিলীপবাবুর এই অভিযোগের জবাবে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশ বলছে করোনা মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের শুধু একনম্বর প্রশাসক নন, সেরার সেরা মুখ্যমন্ত্রী। ঘরে বসে সই করে শুধু নির্দেশ দিচ্ছেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, নিজে রাস্তায় নেমে ডাক্তার-নার্স-পুলিশ থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী, সবাইকে করোনা যুদ্ধে উৎসাহিত করছেন। মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পথে তৃণমূলকর্মীরাও পাড়ায় পাড়ায় রাস্তায় গন্ডি দিয়ে সামাজিক দূরত্ব রাখতে সবাইকে বাধ্য করছেন। ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌছে দিচ্ছেন। বিজেপি শুধু ঘরে বসে বিবৃতি দিয়ে ঘৃণ্য-নোংরা রাজনীতি করছে।”
মৃত্যু নিয়ে এদিন দিলীপের অভিযোগ, ডাক্তাররা মারা যাচ্ছেন। ডিভিসির সিনিয়র অফিসার মারা গিয়েছেন। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখানোর চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি চলছে। গোপনে দেহ পোড়ানো হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। করোনা পজিটিভ রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করার কথা মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা অবৈজ্ঞানিক বলে মন্তব্য করেন দিলীপ ঘোষ। অবশ্য এই ‘অবৈজ্ঞানিক’ শব্দ নিয়ে পালটা কটাক্ষ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বলেন, “আবার বলছি, ওনাকে ঘরের বাইরে কী হচ্ছে, কেন্দ্র-রাজ্য সরকার কী করছে তার কোনও খবর উনি রাখছেন না। উনি নিজেই জানেন না, আজ কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশিকা জারি করে বলেছে, যাঁরা বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে আইসোলেশনে থাকতে পারে সে গাইড লাইন মেনে থাকবেন।”এরপরই দিলীপকে নিকৃষ্ট মনের ব্যক্তি বলে ইঙ্গিত করে পুরমন্ত্রী বলেন, “শূন্য কলসি বাজে বেশি, ঘরে বসে রাজনীতি করলে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.