অর্ণব আইচ: তাঁর লেখনী চুরি গিয়েছিল। চোর ধরাও পড়েছে। কিন্তু কলম ফেরত পেতে হলে তাঁকে যে আদালতে গিয়ে নিজের জিনিসটি শনাক্ত করতে হবে! নাম হলই বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তা বলে ছাড় পাবেন কেন? হ্যাঁ, আদালত ছাড় দেয়নি কবিগুরুকে। হাজিরার জন্য সমন পৌঁছে গিয়েছিল সোজা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিশ্বকবিকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। বরং বিশ্ববরেণ্য নোবেলজয়ীকে এহেন সমন পাঠানো যে ঠিক হয়নি, স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেট তা স্বীকার করে দস্তুরমতো লজ্জা প্রকাশ করেন। ক্ষমাও চান।
[ভারতরত্ন দেওয়া হোক কিশোর কুমারকে, দাবিতে মিছিল]
‘ইতিহাসের আয়নায়’। এই শিরোনামেই কলকাতা পুলিশের এমন নানা বিচিত্র অতীতকে সর্বসমক্ষে ফিরিয়ে আনছে লালবাজার, নিজেদের ফেসবুক পেজ মারফত। মানিকতলায় কলকাতা পুলিশ মিউজিয়ামের পাশাপাশি অন্তর্জাল দেওয়ালকেও নিজেদের ইতিহাসের স্মারক করে রাখতে চাইছেন লালবাজারের কর্তারা। যাতে চোখ মেলে আমজনতা সাক্ষী হতে পারবেন ঐতিহাসিক নানা ঘটনার, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কলকাতা পুলিশের নাম। তেমনই একটি হল রবীন্দ্রনাথের কলম চুরি। ঘটনাটি ১৯১৮ সালের। যার পাঁচ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পান। যে ঝরনা কলম দিয়ে ঝরে পড়েছে রাশি রাশি কালজয়ী কাব্য—নাটক, সেটিই একদিন উধাও হয়ে গেল। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তন্নতন্ন করেও হদিশ মিলল না। লেখনীটি হারানোর দুঃখ একাধিক সাহিত্যসভায় শোনা যায় কবিগুরুর কণ্ঠে। কিছুদিন পর হঠাৎই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে পুলিশ হাজির। জোড়াসাঁকো থানার তৎকালীন ওসির পিছনে কয়েকজন কনস্টেবল। একজনের সঙ্গে কোমরে দড়ি বাঁধা এক দাগি চোর। থানার বড়বাবু কবিকে জানান, দাগির কাছে একটি ঝরনা কলম পাওয়া গিয়েছে। ধৃত স্বীকার করেছে, ওই বাড়ি থেকেই সে কলমটি চুরি করে।
[প্রসূতিদের জন্য উপহার, বাড়ছে মাতৃত্বকালীন ছুটি]
সাধের কলম দেখেই উচ্ছ্বসিত কবিগুরু সেটি ফেরত চাইলেন। কিন্তু আইনের ফাঁস! ওসি জানালেন, চুরির মামলা শুরু হচ্ছে। তাঁকে আদালতে গিয়ে কলমটি শনাক্ত করতে হবে। আদালত নির্দেশ দিলে ফেরত পাবেন। ওই সময় লালবাজারের একটি অংশে ছিল পুলিশের দপ্তর, অন্য অংশে পুলিশ কোর্ট। সাক্ষী হয়ে হাজিরার জন্য লালবাজারের সেই আদালত থেকেই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে সমন পাঠানো হয়। রবীন্দ্রনাথ নিজের আইনজীবী প্রয়াত সংগীতশিল্পী সুচিত্রা মিত্রর বাবা সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়কে বলেন, শুধুমাত্র কলম শনাক্তকরণের জন্য আদালতে যেতে চান না। সৌরীন্দ্রবাবু কবির বক্তব্য পৌঁছে দেন আদালতের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেটকে, যিনি নিজেও ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য অনুরাগী। তিনি কোর্ট ইন্সপেকটরকে ডেকে রীতিমতো ধমকে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য যদি সামান্য ব্যতিক্রম না হয়, তবে সে আইন না থাকাই ভাল। ম্যাজিস্ট্রেট জানান, সমন সই করার সময় তিনি খেয়াল করেননি যে সেটি নোবেলজয়ীকে পাঠানো হচ্ছে। আইনজীবীর মাধ্যমেই করজোড়ে তিনি বিশ্বকবির কাছে ক্ষমা চান। শেষে যত্ন সহকারেই কলমটি ফেরত পাঠানো হয় রবীন্দ্রনাথকে। ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে সৌরীন্দ্রমোহনবাবুরই লেখা ‘উকিলের ডায়েরি’ গ্রন্থে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.