অলংকরণ: সুলগ্না ঘোষ।
স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গ সিপিএমের রক্তক্ষরণ অব্যাহত। মাঠে ময়দানে যখন দুর্বল সংগঠন, বুথে লোক নেই তখন সোশাল মিডিয়ায় বিপ্লব করে আর তরুণ প্রজন্মকে সামনে এনেও ব্যর্থ হয়েছে আলিমুদ্দিন। কাটেনি শূন্যের গেরো। চব্বিশের লোকসভা ভোটের ভরাডুবির কারণ খুঁজতে যখন দলের অন্দরে চলছে কাটাছেঁড়া। তখন বোমা ফাটালেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর বিস্ফোরক বিকাশ ভট্টাচার্যর প্রশ্নের মুখে সিপিএমের তরুণ ব্রিগেড।
সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিপিএমের আইনজীবী নেতা মনে করছেন, বিজেপি বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেছে নিয়েছে মানুষ। সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। বুথভিত্তিক সংগঠন নেই। এর পরই দলের কারও নাম না করে বিকাশ বলেন, “ব্যক্তি বিশেষ থাকবে। কিন্তু ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেলে মুশকিল। মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ সেটাই বলে। কাউকে ‘ক্যাপ্টেন’ বললাম, কাউকে ‘আগুনপাখি’ বললাম সেটা আমার ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি। এটা সামাজিক অভিব্যক্তি নয়।’’ কারও নাম না করলেও বিকাশ ভট্টাচার্য দলের তরুণ ব্রিগেডকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং ‘ক্যাপ্টেন’ বলতে যে মীনাক্ষী—কেই বুঝিয়েছেন তিনি তেমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। প্রসঙ্গত, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে ‘ক্যাপ্টেন’ করে লোকসভা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল সিপিএম। কিন্তু মীনাক্ষীর ডাকে দলের কর্মী-সমর্থকরা ব্রিগেড ভরালেও ভোট কেন বাড়ল না। তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে দেওয়ার পরও কেন আমজনতার মন পাওয়া গেল না? ভোট পরবর্তী পর্যালোচনায় নেমে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে সিপিএমের অভ্যন্তরে। এটা নিয়েই সিপিএম সাংসদ বলতে চেয়েছেন যে, ‘ক্যাপ্টেন’, ‘আগুনপাখি’ নাম দিয়ে যে প্রচার চলছে সেটা ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার নিদর্শন। সেটা সমষ্টিকেন্দ্রিক হওয়া উচিত। কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শই তাই। শুধু তাই নয়, যাঁর সম্পর্কে এটা হচ্ছে তিনি যেন এই প্রচারে গা ভাসিয়ে না দেন, সেই ‘ক্যাপ্টেন’—কে সতর্কও করেছেন প্রবীণ এই সিপিএম নেতা।
উল্লেখ্য, যাঁদের উপর ভরসা করে সিপিএম এবার লোকসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল আলিমুদ্দিনের সেই তরুণ প্রজন্মের ‘দাপুটে’ সিপিএম প্রার্থীরা এবার নিজের বাড়ির বুথেই হেরেছেন। তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ে সিপিএম কোনও দাগই কাটতে পারেনি। দলের বানানো ‘ক্যাপ্টেন’ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে প্রচারে তুলে ধরেও ডাহা ফেল করেছে সিপিএম। সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে যে ভোট পাওয়া যায় না তার পরেও নয়া প্রজন্মের একটা অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের যুক্ত করে রেখেছে বলেও মনে করছেন প্রবীণ এই সিপিএম নেতা। সস্তা জনপ্রিয়তার ঝোঁক চললে দুর্বলতা বাড়বে বলেও বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দলকে আয়না দেখানোরই চেষ্টা করেছেন বিকাশ ভট্টাচার্য। সোশাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া, রিলস তৈরি হওয়া, এসবের থেকে এলাকা ও বুথভিত্তিক সংগঠন তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। এই সংগঠন তৈরিতেই ব্যর্থতা ধরা পড়েছে সিপিএমের। এদিকে, দলের প্রবীণ নেতার এই প্রশ্নের মুখে সিপিএমের ‘ক্যাপ্টেন’ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের পালটা বক্তব্য, ‘‘আমরা তো রাজনৈতিক কর্মী। একটা নির্দিষ্ট দলের আদর্শ ও নীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সেই রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে তৈরি হয়েছি। আমাদের দল কাউকে ‘আগুনপাখি’ বলে তৈরি করেনি। যেটা তৈরি করেনি সেই ফাঁদে পড়ার কোনও প্রয়োজন নেই।’’
এদিকে, ভোট বিপর্যয়ের পর শনিবার পরাজিত সমস্ত প্রার্থীদের নিয়ে আলিমুদ্দিনে বৈঠক করে সিপিএম। সেখানে দুই প্রবীণ প্রার্থী পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও ছিলেন। ছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেখানেও উঠে এসেছে গ্রামে—গঞ্জে দলের দুর্বল সংগঠনের স্বীকারোক্তি। প্রত্যেকেই একমত, প্রচারে—সভা—সমাবেশে লোক হলেও ভোটবাক্সে তার প্রতিফলন হয়নি। বুথ আগলানোর লোক ছিল না। অর্থাৎ, বুথে সক্রিয় কর্মীই ছিল না। শুধু তাই নয়, শ্রমিক—কৃষকদের কাছে যেতেই পারেনি পার্টি। তাদের সমর্থন কার্যত মেলেনি। শ্রমিক—কৃষকদের স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আন্দোলন বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সিপিএমের প্রার্থীরা। এদিন পার্টির যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বও পর্যালোচনা বৈঠক করে। ভরাডুবির মূল্যায়নে সিপিএমের যুব সংগঠন মনে করছে, ছাত্র—যুবরা মাঠে নামলেও বামেদের একাংশ নিষ্ক্রিয় ছিল। এটাও ভরাডুবির অন্যতম কারণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.