ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: তাদের দেখা যায় না!
কিন্তু মাঝেমধ্যে অনুভব করা যায়! ভরসন্ধেয় কেউ যদি এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে মর্গের সামনে শ্যাওড়া গাছের চাতালে বসে-একটা অদ্ভুত হাওয়া বয়ে যায়! গাছের পাতা নড়ে না! মড়া পচার গন্ধের মধ্যেই সুগন্ধী বেলফুল বা পারফিউমে আমোদিত হয়।!
কয়েক সপ্তাহ আগের কথা, গলায় দড়ি দিয়ে মৃত এক বৃদ্ধের দেহ নেওয়ার জন্য় লাশকাটা ঘরের সামনে অপেক্ষা করছিলেন ৪-৫ জন যুবক। আচমকা একটি ঘূর্ণি হাওয়া, সপাটে দরজা খুলে গেল লাশকাটা ঘরের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ব্যক্তি ছুটে বেরিয়ে আসলেন লাশকাটা ঘর থেকে, চিৎকার করে বলে উঠলেন, “আমি পারব না। অসম্ভব।” তাঁর চোখ দুটো ঠিকরে বেরোচ্ছিল। উদভ্রান্তের মতো ঘোলাটে দৃষ্টি। ছেলেরা হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী হয়েছে? বলার সঙ্গে সঙ্গে ফের একটা দমকা হাওয়া। দলের একজন উলটে পড়ে গেলেন। বাকি ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দেয়। দিনটা ছিল শনিবার। ভরসন্ধে। কিছুক্ষণ পর দল ভারি করে যুবকরা ফিরে আসেন লাশকাটা ঘরের সামনে, জানা যায় যতবারই ওই বৃদ্ধের মৃতদেহ ধরতে চাইছিলেন ততবারই সটান উঠে বসেছিল মৃতদেহ। বার কয়েক বন্ধ চোখ খুলে গিয়েছিল, জিভটা না কি বের হয়ে এসেছিল। বার কয়েকের চেষ্টা লাশটাকে কোনও মতে শোয়ানো হলেও ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। লাশ বাঁধার সময় এক ডোমের কানের কাছে কে যেন বলে যাচ্ছিল, ‘কাজটা ভালো হল না। পরে মজা টের পাবি!’ শোনা যায়, অপঘাতে মড়া সেই বৃদ্ধের লাশ নিয়ে যেতে বেগ পেতে হয়েছিল যুবকদের। এরকম অসংখ্য গল্প জড়িয়ে আছে এনআরএসের লাশকাটা ঘরের সামনের শ্যাওড়া গাছকে নিয়ে। সিমেন্টের চাতাল করাওই জায়গায় লাশকাটা ঘরের কেউ ভুলেও বসে না শনিবার। মাঝেমধ্যে না কি খোনা গলা কেউ ডুকরে কেঁদে ওঠে! ঘূর্ণি হাওয়া বয়! সদ্যোজাতর কান্না, তরুণীদের হাসি, সবমিলিয়ে একটা অদ্ভুত মিথ তৈরি হয়ে গিয়েছে শ্যাওড়া গাছকে ঘিরে। আর এই মিথটাকে সম্বল করে ফি বছর কালীপুজোয় ভূত পুজো করা হয় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শ্যাওড়া গাছের নিচে।
কালীপুজোর বদলে ভূত পুজো? কেন? অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী অ্যানাটমির শিক্ষক। তাঁর কথায়, “তাই না কি! দেখতে হচ্ছে। কিন্তু কালীপুজো তো ছুটি থাকে। তাই যাওয়া হবে না।” তিনি বলেন, “৩০ বছরের শিক্ষকতার জীবনে অনেক চেষ্টা করেও ভূতের দেখা পাই না। আক্ষেপটা থেকেই যাবে। হাসপাতালে পুজো অনুচিৎ। কিন্তু ভূত পুজোতে বাধা আছে কি না তা জানতে হবে।” বলেই মুচকি হেসেছেন। এনআরএসের মতোই ক্যালকাটা পুলিশ মর্গকে ঘিরেও ভূতের ছলাকলা জড়িয়ে আছে। অ্যানাটমির প্রবীণ শিক্ষক ডা. অজয় গুপ্তের কথায়, “১৯৭২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনার জন্য কলকাতা পুলিশ মর্গের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অনেকেই ভূত দেখেছে। সে সব গপ্পও শুনেছি। কিন্তু মাঝরাতেও আমার সঙ্গে ভূতের মোলাকাত হয়নি। তবে ভূতেদের চ্যালেঞ্জ রইল, তারা যেন ভরসন্ধেয় একবারটি দর্শন দেন।”
শুধু হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজের মর্গ নয়, রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অলিন্দেও না কি ভূতের আনাগোনা হয়। বুটের দুদ্দাড় শব্দ, নূপুরের রিনঝিন, গুলি চালানোর শব্দ এমন অনেক কিছু জড়িয়ে আছে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অলিন্দে। এখনও রাত নটার পর রাইটার্সের ভিতরে কাউকে দেখা যায় না। শোনা যায়, এক পুলিশ আধিকারিক নাকি সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসেন আবার উঠে যান। অনেকটা মেহের আলির মতো!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.