ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: ফের কলকাতায় সক্রিয় ভরতপুর গ্যাং। বান্ধবী সেজে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল চ্যাট ও ভিডিও আপলোড করে দেওয়ার নামে ব্ল্যাকমেল। দক্ষিণ কলকাতার পাটুলির এক যুবক ওই ব্ল্যাকমেল চক্রের পাতা ফাঁদে পা দেন। ওই চক্রের সদস্যদের পাঠান পাঁচ লক্ষের টাকা। কিন্তু আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করতেই রুখে দাঁড়ান ওই যুবক। ভয় কাটিয়ে লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ জানান।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এই ধরনের আরও কিছু অভিযোগ ফের আসতে শুরু করেছে। কয়েক মাস আগেই নারকেলডাঙায় এই ব্ল্যাকমেল চক্রের ফাঁদে পা দেন টলিউডের এক অভিনেতা ও অভিনেত্রীর আপ্তসহায়ক। তাঁকেও ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করা হয়। যদিও ব্ল্যাকমেল চক্রের ক্রমাগত চাপ তিনি নিতে পারেননি। গলায় দড়ি দিয়ে নিজের বাড়িতেই আত্মঘাতী হন তিনি। এই ঘটনায় গত মার্চ মাসে রাজস্থানের ভরতপুর থেকে আয়ুব খান নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এমনকী, ওই ব্যক্তি সে তার নাবালক ছেলেকেও এই ব্ল্যাকমেল করে তোলাবাজির কাজে লাগিয়েছিল বলে অভিযোগ।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, পাটুলির বাসিন্দা ওই যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বন্ধুত্বের’ একটি চ্যাটের পেজ দেখতে পান। সেখানে ক্লিক করার পর এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ওই অ্যাপটি ব্যবহার করার জন্য তাঁকে দু’হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। তিনি ওই টাকা একটি ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে পাঠানোর পর ওই যুবতী যুবকের সঙ্গে ‘কথা বলতে’ শুরু করে। হোয়াটস অ্যাপেই দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ হত। যুবতী নিজেকে ‘রত্না’ বলে পরিচয় দেয়। দু’জনের মধ্যে ভিডিও চ্যাটে কিছু অশ্লীল কথাও হতে থাকে। ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমেই ‘ভারচুয়ালি’ দু’জন ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে যুবতীর ‘অনুরোধে’ কিছু টাকাও পাঠান যুবক। এর মধ্যেই এক ব্যক্তি যুবককে ফোন করে। সে নিজেকে দিল্লির এক সাংবাদিক আশিস কুমার বলে পরিচয় দেয়। জানায়, সে লোধি রোডের বাসিন্দা। ব্যাপারটি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সে একটি পরিচয়পত্র ও ছবি পাঠায়। বলে, ওই যুবতী ভিডিও কলগুলি রেকর্ড করেছে। তাদের কাছে সেই রেকর্ড করা অশ্লীল ভিডিও ও চ্যাটগুলি রয়েছে। পাঁচ লক্ষ টাকা না দিলে ওই ভিডিও ও চ্যাট সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা আপলোড করে দেবে। প্রথমে যুবক জানান, অত টাকা দিতে পারবেন না। তিনি ৬ হাজার ১৫০ টাকা ই ওয়ালেটে পাঠান। কিন্তু ফের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে ওই ব্যক্তি। শুরু হয় ব্ল্যাকমেল করা।
গত ২৬ মে পর্যন্ত এভাবে তিনি বেশ কয়েক দফায় আরও পাঁচ লক্ষ টাকা পাঠান। পাটুলির যুবক ওই ব্যক্তিকে অনুরোধ জানান, সে যেন ওই ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড না করে। কিন্তু সেই টাকা দেওয়ার পরও ব্ল্যাকমেল করতে থাকে সে। আরও পাঁচ লক্ষ টাকা না দিলে ওই ভিডিও আপলোড করা হবে বলে ব্ল্যাকমেল করা হয়। সে অনুরোধ জানিয়ে বলে যে, তার পরিবারের জমানো টাকা সে পাঠিয়েছে। তার পক্ষে আর টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ভিডিও আপলোডের হুমকি দেওয়া হয় তাকে। এর পরই ওই যুবক ঘুরে দাঁড়ান। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে, পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এই ধরনের ব্ল্যাকমেলের পিছনে রয়েছে রাজস্থানের ভরতপুরের গ্যাং। মহিলার সঙ্গে ভিডিও চ্যাটও সম্পূর্ণ ‘রেকর্ডেড’। অর্থাৎ বাস্তবে ওই মহিলার অস্তিত্ব নেই। কোনও এক মহিলার চ্যাট বা অশ্লীল ভিডিও আগে থেকেই রেকর্ড করা থাকে। ল্যাপটপ বা কম্পিউটার স্ত্রিনের সামনে মোবাইল রেখে জালিয়াতরা এমনভাবে ওই চ্যাট করে, যাতে মনে হয় অভিযোগকারী কোনও মহিলার সঙ্গেই কথা বলছেন। ওই ভিডিও চ্যাট রেকর্ড করার পরই শুরু হয় ব্ল্যাকমেলিং। ফোন করে কেউ নিজেকে পুলিশকর্তা, কেউ সাংবাদিক, আবার কেউ বা প্রশাসনিক কর্তা বলে পরিচয় দেয়। ভুয়ো কার্ডও দেখায়। এর আগে নারকেলডাঙার ঘটনায় নিজেকে জালিয়াত কলকাতা পুলিশের এক গোয়েন্দাকর্তা বলেও পরিচয় দিয়েছিল। তাই পুলিশের পরামর্শ, কেউ যদি এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়েও দেন, তবে ভয় না পেয়ে তিনি যেন টাকা না দেন। বরং পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। পাটুলির যুবকের ক্ষেত্রে অভিযুক্তর সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.