সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লড়াইটা কখনওই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বা শ্রীজিব বিশ্বাস ছিল না। লড়াইটা শুরু থেকেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে ‘বেঞ্চমার্ক’ সেট করেছেন, সেই বেঞ্চমার্ক টপকাতে পারেন কি না, সেটাই ছিল দেখার। রবিবাসরীয় সকালে ভবানীপুরের আকাশের কালো মেঘ সরতেই দেখা গেল বাংলার জননেত্রী স্বমহিমায় উজ্বল। তাঁর আগের জয়ের ব্যবধান তো তিনি টপকেছেনই, ভোট শতাংশের বিচারে সর্বকালের অন্যতম বড় জয়ের রেকর্ডও গড়ে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী আবারও প্রমাণ করলেন তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।
২০১১ উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর জয়ের ব্যবধান ছিল ৫৪ হাজার ২১৩। এবার সেই ব্যবধান টপকে গিয়ে মমতা ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটে। ২০১১ সালের থেকে মমতার জয়ের ব্যবধান বাড়াটা নিঃসন্দেহে বিরাট বড় সাফল্য। কারণ, সেদিন বিপক্ষে মোদি-শাহর (Amit Shah) বিজেপির মধ্যে প্রবল পরাক্রমী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তখন কংগ্রেসও ছিল তৃণমূলের সঙ্গে। তাছাড়া, সেসময় সদ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, আজকের মতো প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার লেশমাত্র সেদিনের নির্বাচনে ছিল না। ২০১৬ সালে মমতা যখন ভবানীপুর থেকে জিতলেন তখন ভোট পড়ে ১,৩৭,৪৭৫। মোট ভোটারের ৬৬.৮৩ শতাংশ। সেসময় ২৬ হাজার ২৯৯ ভোটে কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সীকে হারিয়েছিলেন মমতা। গত এপ্রিল মাসে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যখন এই কেন্দ্রে জিতলেন, তখন ভোট পড়েছিল ১,২৭,৫৩৬। মানে ৬১.৭৯ শতাংশ। শোভনদেব জিতেছিলেন ২৮,৭১৯ ভোটে। এবারে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৭ শতাংশের সামান্য বেশি। অর্থাৎ আগেরবারের থেকে অনেকটাই কম। তা সত্ত্বেও তৃণমূল নেত্রীর জয়ের ব্যবধান আগের সব নির্বাচনের থেকে হাজার হাজার বেশি।
অর্থাৎ শেষবার মমতা যখন ভবানীপুর (Bhabanipur By-Election) থেকে প্রার্থী হন, সেসময় যা ব্যবধান ছিল, এবারে তার দ্বিগুণ ব্যবধানে জয় পেলেন তৃণমূল নেত্রী। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মমতা নিজেই নিজের অতীতের রেকর্ড ভাঙলেন। যে ব্যবধানে তৃণমূল নেত্রী জিতলেন, সেটা হয়তো খুব একটা সহজ ছিল না। কারণ, সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনেও ভবানীপুরে বিজেপি ৪০ হাজারের উপরে ভোট পায়। এবারেও বিজেপি চেষ্টার কোনও কসুর করেনি। ভবানীপুরে একটা বড় অংশের ভোটার হিন্দিভাষী। তাঁদের টার্গেট করেই অবাঙালি প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করে গেরুয়া শিবির। প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা (Priyanka Tibrewal) নিজে এবং দলের রাজ্য নেতারা সকলেই পুরোদমে প্রচার করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে। বিজেপির একটাই টার্গেট ছিল, যেভাবেই হোক ২০১১ সালের নির্বাচনের থেকে ব্যবধান কিছুটা হলেও কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ক্যারিশমাতেই সেটা সম্ভব হল না। ভবানীপুর চাইল নিজের মেয়েকেই। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষিতে এই জয়টা হয়তো তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ভীষণ প্রয়োজনও ছিল।
আসলে এই ভবানীপুরের ভোটপ্রচারে গিয়েই ‘বি ফর ভবানীপুর, বি ফর ভারত’ স্লোগান দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করেছিলেন, ‘ভবানীপুরের পর খেলা হবে সারা দেশে।’ অর্থাৎ, তৃণমূল কংগ্রেস মমতাকে রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় স্তরের প্রধান বিরোধী নেত্রী হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। একলাফে নিজেদের দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেসও (TMC)। এই দুটি উদ্দেশ্য সফল করতেই মমতাকে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ভাবমূর্তিতে তুলে ধরা প্রয়োজন। প্রমাণ করতে হত, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতাই শ্রেষ্ঠ। বিজেপির প্রবল পরাক্রম যেভাবে তিনি রুখে দিতে পারেন, সেভাবে আর কেউ পারে না। তৃণমূল বলছে ভবানীপুরের ফল মমতার সেই শ্রেষ্ঠত্বকেই প্রমাণ করল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.