কৃষ্ণকুমার দাস: তিনদিনের মধ্যে ভাড়ার টাকা না দিলে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হবে। হোটেল মালিকদের হুমকির মুখে ভেলোরে আটকে পড়া বাঙালি পরিবারগুলিকে। তামিলনাড়ু সরকার ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লজ বা গেস্ট হাউসগুলির ভাড়া ১০০ শতাংশ মকুব করলেও সেখানকার মালিক বা ম্যানেজাররা ১ এপ্রিল থেকেই টাকা দাবি করছেন বলে অভিযোগ। ভেলোরে বাঙালিদের পরিচিত বেশ কিছু বড় হোটেল আবার ২১ এপ্রিল থেকেই পুরো ভাড়ার টাকা দাবি করছেন, এই অভিযোগ জানিয়ে নবান্নে ১০৭০ নম্বরে ফোন আসছে।
অসুস্থ রোগী সঙ্গে নিয়ে দু’সপ্তাহের বেশি অর্ধাহারে থাকা পরিবারগুলি অসহায় হয়ে নবান্নর পাশাপাশি রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দ্বারস্থ হয়েছে। বিভিন্ন জেলার আটটি পরিবারকে বৃহস্পতিবারই আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছেন সেচ ও পরিবহণ মন্ত্রী। প্রচারবিমুখ শুভেন্দু নিজের কার্যালয় মারফত জানিয়ে দিয়েছেন, ৩ মে পর্যন্ত ওই পরিবারগুলির দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুর সুভাষ কলোনির সুশান্ত সাহার পরিবারের ১০ জন হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে দিয়ে আটকে পড়েছেন। তাঁদেরও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার মানবিক পরিবহণমন্ত্রী।
ট্রেন বন্ধ থাকায় চিকিৎসা করাতে যাওয়া হাজার দু’য়েক রোগী ও আত্মীয় পরিজনেরা ভেলোরে হোটেল ও গেস্ট হাউসে আটকে পড়েছেন। যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি আছে, তাঁরা এক লক্ষ টাকা ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ঘরে ফিরছেন। কিন্তু অধিকাংশ লোকের সে ক্ষমতা নেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠির জেরে তামিলনাড়ু সরকার হোটেল ভাড়া মকুব ও তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় লকডাউন চালু হতেই ১৫ এপ্রিল থেকে সেই সুবিধা প্রত্যাহার করে দিনে মাত্র একবেলা খাবার দিচ্ছে তামিলনাড়ু সরকার। সেই খাবারের পরিমাণ অনেক কম, খেতেও বিস্বাদ। এছাড়া ৫০% হোটেল ভাড়া ও বাকি ৫০% রোগীর পরিবারকে দিতে হবে বলে ভেলোর জেলার জেলাশাসক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
তবে বুধবার থেকে এই বিজ্ঞপ্তি অগ্রাহ্য করেই অধিকাংশ হোটেল ও গেস্ট হাউস এক্ষুনি ১ এপ্রিল থেকে ঘর ভাড়া দাবি করছেন। নিজের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভেলোরের সাইদাপেট লোকনাথ সেবা নিকেতনে আটকে পড়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোনীর শম্পা রায়। সঙ্গে ৬৯ বছরের অসুস্থ মা রেবা দাস, এবং নয় বছরের ছেলে। ফোনে ভেলোর থেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে শম্পা এদিন অভিযোগ করেন “আচমকা গতকাল ম্যানেজার ডেকে পাঠায়। বলেন, ১ এপ্রিল থেকে অর্ধেক ভাড়া দিতে হবে। আর ২১ এপ্রিল থেকে ঘরের পুরো ভাড়া চাই। বকেয়া টাকা তিনদিনের মধ্যে না পেলে ঘর ছেড়ে দিতে হবে। যখন জেলাশাসকের বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে বলা হয়, তখনও তাঁরা কিছুই শুনতে চায়নি। উলটে ভাড়া না পেলে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার হমকি দিয়েছেন।” বিষয়টি নিয়ে নবান্নকে ১০৭০ নম্বরে জানালে তাঁর ভেলোরের জেলাশাসকের অফিসের নম্বর দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু জেলাশাসকের দপ্তর কিছু করছে না বলে শম্পার অভিযোগ।
হোটেলের তরফে হুমকির জেরে অসহায় অবস্থায় পড়ে পরিবারগুলিও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সাহায্য চেয়ে তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, হাতিয়াড়ার অমিতাভ পাত্র, বর্ধমান মঙ্গলকোটের উত্তম দাস ও নিগমের অসিতবরণ মণ্ডল, হলদিয়া দুর্গাচকের কৌশিক মাঝি, বীরভূমের শিরসীতার মহম্মদ মহসিন, বাঁকুড়ার কানকাটার সুব্রত নন্দীর পরিবার। বাঁশদ্রোনীর শম্পা রায়ও শুভেন্দুর কাছে সাহায্য চেয়ে কাতর আবেদন জানান। প্রত্যেকের সঙ্গে তিন থেকে সাতজন সদস্য রয়েছেন। পরিবহণ মন্ত্রী নিজেই সমস্ত পরিবারের ফোন নম্বর ও অ্যাকাউন্ট নম্বর জোগাড় করে ৩ মে পর্যন্ত থাকা, খাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আশ্বস্ত করেছেন, লকডাউন উঠে গেলে রাজ্য সরকারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.