কিংশুক প্রামাণিক ও সন্দীপ চক্রবর্তী: “বাংলাই এখন বিশ্বের বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল।”-বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এই বার্তাটাই স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাস্তবিকভাবে দেখা গেল সেটাই। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, “এবারের বাণিজ্য সম্মেলনে নতুন বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হবে ২০ লক্ষ।” দেশের প্রথম সারির সব শিল্পপতিই একবাক্যে জানিয়ে দিলেন, বাংলাই এখন ডেস্টিনেশন।
মঙ্গলবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের শুরুর দিনেই রাজ্যকে ‘বেস্ট বেঙ্গল’ বলে সুরটা বেঁধে দেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি। লক্ষ্মী মিত্তল থেকে সজ্জন জিন্দালের মতো দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরাও জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের মানচিত্রে বাংলা শুধু এগোয়নি, শিল্প-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীরা কর্তারা বাংলায় বিনিয়োগের বার্তাটা স্পষ্ট করে দেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে, বুধবার দেখা গেল শিল্পপতিদের চোখে বিনিয়োগের ডেস্টিনেশন এখন বাংলাই। রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগের কথা জানালেন শিল্পপতিরা। প্রণব আদানির মতো দেশের স্বনামধন্য শিল্পপতি তাঁর বার্তায় জানিয়ে দিলেন, বাংলা এগিয়েছে। এটাই এখন বিনিয়োগের কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “মুকেশ আম্বানি বেস্ট বেঙ্গল বলেছেন। বাংলাই এখন বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল।” দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ১১০টি মউ স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ বছরের বাণিজ্য সম্মেলন থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মুকেশ আম্বানির সংস্থায় কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১ লক্ষ। এছাড়াও অন্যান্য শিল্পগোষ্ঠী মিলিয়ে কর্মসংস্থান হবে ২০ লক্ষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিবহণ, শিক্ষা, পরিবেশ, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, ম্যানুফেকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে।” দেশের তাবড় শিল্পপতিদের উপস্থিতিতে এবারের বাণিজ্য সম্মেলন সফল হয়েছে জানান মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আগামী বছরের শিল্প সম্মেলন হবে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি। ৭ তারিখ হবে ওয়ার্ল্ড সেশন। আর ৮ তারিখ হবে কনক্লেভ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মউ স্বাক্ষর হয়েছে। কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫ একর করে জমি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও আগামী ২৮ তারিখ থেকে অণ্ডাল-দিল্লি বিমান পরিষেবা শুরু হতে চলেছে। কলকাতার কাছে হবে অর্টিজম সেন্টার।
বিশ্বের ৩২টি দেশের প্রায় ৪০০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দেন। ১০৪০টি বৈঠক হয়। তাতে আলোচনা হয়েছে সদর্থক এবং ইতিবাচক। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ছোট-বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতে বাংলাই এখন ব্যবসার জায়গা।” বাংলায় শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সবরকম সহযোগিতা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক ও সুস্পষ্ট শিল্পনীতির কথা উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বস্তুত, বদলে যাওয়া বাংলা দেখে উচ্ছ্বসিত দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, একদিকে সবক্ষেত্রে রাজ্য এগোচ্ছে। অন্যদিকে, কৃষ্টি-সংস্কৃতির বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আতিথেয়তায় তাঁরা মুগ্ধ। রাজ্যে উপযুক্ত শিল্পবান্ধব পরিবেশ রয়েছে, পরিকাঠামোও গড়ে উঠেছে। ফলে এবার বিনিয়োগের লক্ষ্য বাংলাই। শিল্পপতিদের বাংলায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব সময় পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করা হবে বলে একবাক্যে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য শিল্পোদ্যোগীদের সাহায্য করতে রাজ্যের মন্ত্রী অমিত মিত্র, অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মলয় ঘটক, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শশী পাঁজাদের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থা মউ সাক্ষর করে। বিদ্যুৎ দপ্তরের সঙ্গে মউ সাক্ষর অনুষ্ঠানে ছিলেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.