স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আরও সরকারি ছ’টি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে ডাক্তারি পড়ার কয়েকশো আসন বাড়ানোর পথে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে সেগুলিকে মেডিক্যাল কলেজের রূপ দেওয়া হচ্ছে। পরের বছরের মধ্যেই অন্ততপক্ষে দু’টি মেডিক্যাল কলেজের যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত করে পঠনপাঠন শুরু করা হবে। সেক্ষেত্রে সামনের বছর নিট-এ ফের কয়েকশো আসন বাড়ার সম্ভাবনা। রাজ্যে আরও বেশি করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রশাসনের কর্তারা জোরকদমে কাজ চালিয়েছেন। যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্যের ছেলেমেয়েদের এমবিবিএস (MBBS) পড়ার সুযোগ আরও বাড়ে।
করোনা মহামারীর এক ধাক্কা রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামো আরও উন্নত করে তুলেছে। বেডের সংখ্যা, ভেন্টিলেশেনের ব্যবস্থা থেকে অক্সিজেন প্ল্যান্ট, অত্যাধুনিক যন্ত্র ও তার ব্যবহারে দক্ষ করে তুলেছে চিকিৎসক, নার্স এবং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, তখনই পাশাপাশি রাজ্যে আরও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (Medical College & Hospital) করার বিষয়ে জোরদার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, পরিকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রয়োজন প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক। সেক্ষেত্রে ডাক্তারি পড়ার ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো বাড়াতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দ্রুত আরও ৬টি মেডিক্যাল কলেজের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা হাসপাতালের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। সেই হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করেই এমবিবিএস পড়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। যাতে ৬টির মধ্যে অন্তত তিনটিতে সামনের বছর থেকে পঠনপাঠনের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়। যে ছ’টি জেলাকে বেছে নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, সেগুলি হল হাওড়ার উলুবেড়িয়া, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, হুগলির আরামবাগ, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, ঝাড়গ্রাম ও জলপাইগুড়ি।
রাজ্যে পরিকাঠামো তৈরি করা গেলেও করোনা দেখিয়ে দিয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকের (Doctor) সংখ্যায় ঘাটতি রয়েছে। করোনার ঢেউ যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা সামাল দিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, পাঠরত চিকিৎসক যাঁরা চূড়ান্ত বর্ষে রয়েছেন, তাঁদেরও করোনা রোগীদের চিকিৎসায় লাগানো হবে। এক সরকারি অফিসারের কথায়, রাজ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে, সেটা জানা কথা। সেটা মেটাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু একটা মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তুলে সেখানে ডাক্তারি পড়ানোর ব্যবস্থা করতে যেমন সময় লাগবে, তেমনই সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় হবে। সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত হয়, জেলায় ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে পঠনপাঠনের পরিকাঠামো তৈরি করবে সরকার। গড়া হবে ক্লাসরুম-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা। সেখানেই যাতে ইন্টার্নশিপ করা যায়, তারও ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাসপাতাল চত্বরে যদি হস্টেলের ব্যবস্থা না করা যায়, সেক্ষেত্রে হাসপাতালের কাছাকাছি করা হবে পড়ুয়াদের থাকার ব্যবস্থাও।
সূত্রের খবর, তেমন প্রয়োজন হলে বেসরকারি কোনও বাড়ি ভাড়া নিয়েও আপাতত কাজ চালানো হতে পারে। প্রতিটি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে ৩০০ কোটি টাকা করে খরচ ধরা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় অনুমোদনও মিলেছে কয়েকটি ক্ষেত্রে। কেন্দ্রের থেকে কিছুটা অর্থও মিলবে। কেন্দ্র দেবে প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থ। বাকিটা রাজ্যের। তবে তার আগে এমবিবিএস কোর্স চালু করার জন্য এমসিআইয়ের একাধিক শর্ত পূরণ করতে হবে। সে সব মেনে ছ’টির মধ্যে হুগলির আরামবাগ ও জলপাইগুড়ির মেডিক্যাল কলেজ পঠনপাঠনের জন প্রায় প্রস্তুত। এখানে পড়ার জন্য নিট-এ সামনের বছরই আসন বাড়ানো হতে পারে। তার প্রস্তুতিও চলছে বলে খবর। কয়েক মাসের মধ্যে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামোর সব দিক খতিয়ে দেখবেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.