ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) সংক্রমণে মৃত্যুর পর শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গর বেশি ক্ষতি হয়, তা জানতে রাজ্যে শুরু হয়েছিল প্যাথোলজিক্যাল অটোপসি (Pathological Autopsy)। এবং তা খুঁজে বের করতে গিয়ে ‘এরোসল’ (সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জলকণা) ছড়িয়ে যাতে অটোপসি করা চিকিৎসক বা পরিবেশ সংক্রমিত না হয়, তার জন্য বিশেষ পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের তিন চিকিৎসকের সেই গবেষণা বা শবদেহ ব্যবচ্ছেদের বিশেষ পদ্ধতি প্রকাশিত হল ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল’-এ।
গবেষণায় ছিলেন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের (RG Kar Medical College) ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রধান চিকিৎসক সোমনাথ দাস, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের (Raiganj Medical College) অ্যানাটমি বিভাগের চিকিৎসক অংশুমান রায় এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের (NRS Medical College) ফরেন্সিক বিভাগের চিকিৎসক রীনা দাস। সোমনাথবাবুর কথায়, “অজানা রোগে রোগে শরীরের কোনও অঙ্গের ক্ষতি হয়ে মৃত্যু হচ্ছে তা জানা গেলে, পরবর্তীতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক সুবিধা হয়। কিন্তু অজানা রোগে মৃতের দেহের ব্যবচ্ছেদ করা কিংবা তা সৎকারে নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া রয়েছে।” তিনি জানাচ্ছেন, তাই বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল। যা আগামী দিনে বিশ্বে গৃহীত হবে।
রাজ্যে মরণোত্তর দেহ দান আন্দোলনের পথিকৃত তথা গণদর্পনের ব্রজ রায়ের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ প্রথম প্যাথোলজিক্যাল অটোপসি করা হয়েছিল আরজি করে। ২০২০-র শেষ থেকে ২০২১-র গোড়ার দিক পর্যন্ত করোনায় মৃত ২৫ জনের এই বিশেষ পদ্ধতিতে শবদেহ ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে ওই হাসপাতালে। ফরেনসিক মেডিসিনের এই তিন চিকিৎসক একযোগে বলেছেন,সাধারণত ময়নাতদন্তের সময় মানবদেহের থুতনির নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত লম্বা করে কাটা হয়। তার পরে বক্ষগহ্বরের পাঁজর কেটে ফুসফুস ও হৃদপিণ্ড বের করা হয়। তাতে মৃতের শরীরের ভিতরে থাকা অসংখ্য ভাইরাস থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
কিন্তু বিশেষ পদ্ধতিতে পেটের উপরে ছোট করে কেটে ডায়াফ্রামের ভিতর দিয়ে ফসুফুস ও হৃদপিণ্ড বের করে পরীক্ষা করা গিয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এতে যেমন কম কাটতে হয়েছে তেমনি সময় কম লেগেছে এবং ‘এরোসল’ ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই কম। এই বিশেষ পদ্ধতিতে আগামী দিনে অন্য অজানা রোগে যদি মৃত্যু ঘটে, তাহলে সেটিরও অটোপসি করা সম্ভব হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.