ফাইল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার: আজ বঙ্গ বিজেপির চিন্তন বৈঠকে লকেট চট্টোপাধ্যায় কি ঝড় তুলবেন? তাঁকে কি আদৌ সেই সুযোগ দেওয়া হবে? দলের বৈঠকের আগে এরকম একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ, বিরোধীপক্ষ দিল্লিতে দরবার করেছে যাতে লকেটকে বলা থেকে আটকানো যায়। কারণ, তিনি মুখ খুললে সমস্যায় পড়বে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির। যারা ভোটের পর থেকে সব কিছুতেই তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছে।
সন্ত্রাসের যুক্তি দিয়ে দলের ভেঙে পড়া সংগঠনের ছবিটাকে আড়াল করতে চাইছে। নিচুতলার নেতা-কর্মীদের বড় অংশই বিক্ষুব্ধ হয়ে বসে গিয়েছে। বুথে বুথে দলের লোকই নেই। সেই ছবিটাকে ঢাকতে চাইছে অমিতাভ চক্রবর্তী ও তাঁর টিম। দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভাল বলে বারবার ভুল রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীরা। তাই আজ লকেট চট্টোপাধ্যায় বৈঠকে মুখ খুললে দলের সেই কঙ্কালসার চেহারাটা তুলে ধরার পাশাপাশি গলদ কোথায়, সেটাই সামনে আনবেন। পার্টির বর্তমান দায়িত্বে থাকা অনভিজ্ঞ ও তৎকাল বিজেপিদের (BJP) নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো যে সম্ভব নয় সেটাই বুঝিয়ে দিতে চান লকেট। দল থেকে বাদ পড়া আদি ও অভিজ্ঞ নেতাদের পক্ষে যে তিনি রয়েছেন সেটাই তিনি আজ স্পষ্ট করে দিতে চান রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে। আর তাই টিম অমিতাভ চাইছে আজ যে কোনওভাবেই হুগলির সাংসদকে মুখ খোলা থেকে আটকাতে হবে। দলের অন্দরের খবর এটাই।
এদিকে, আত্মবিশ্লেষণ নিয়ে ব্যাখ্যায় শুক্রবার লকেট চট্টোপাধ্যায়ের (Locket Chatterjee) বক্তব্যে ঝড় উঠেছে দলের অন্দরে। লকেট বলেছেন, “আত্মবিশ্লেষণ করা দরকার। যে হার হয়েছে তা মাথা পেতে নেওয়া উচিত। বিজেপির সমস্ত কর্মী ও আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। ভুল-ত্রুটি শোধরাতে হবে। একে অপরের উপর দোষ বা দায় চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। সংগঠনের কোথায় খামতি তা দেখতে হবে।” হুগলিতে দলের ফল হতাশাজনক নিয়ে তাঁর বক্তব্য, যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা বলতে পারবেন। আবার দলের বিদ্রোহ নিয়েও মুখ খুলেছেন হুগলির সাংসদ। তিনি বলেন, “দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সকলের সঙ্গে আমি কথা বলব। কে বিদ্রোহী এসব নিয়ে ভাবি না। সবাই আমার কাছে দলের কর্মী ও নেতা।”
তৎকাল ও নব্য বিজেপি এবং আদি বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। দলের আদি নেতাদের বাদ দিয়ে কতিপয় নব্য ও তৎকাল নেতা রাজ্য পার্টির ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে। তখন লকেট চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর পরামর্শ, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার দরকার আছে। পুরনো-নতুনদের নিয়ে মিলিতভাবে চলতে হবে। দলের নেতারা যখন হারের কারণ হিসাবে শুধু সন্ত্রাসকে খাড়া করতে চাইছেন তখন লকেটের কথায়, আমাদের যেটা ভুল হয়েছে সেটা দেখতে হবে। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটা ফিরিয়ে আনা দরকার। লকেট এদিন সকলকে নিয়ে চলার যে বার্তা দিয়েছেন তাতে খুশি বিজেপির বড় অংশই। ওই অংশের বক্তব্য, দলের নেত্রী হিসাবে সঠিক কথাই বলেছেন লকেট। যা থেকে বর্তমান তৎকাল নেতারা, যাঁরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছেন, তাঁদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করছে রাজ্য বিজেপির বিদ্রোহী শিবির।
এদিকে, দলের মধ্যে প্রশ্ন, আজ সাংগঠনিক বৈঠকে দলের লাগাতার হারের আত্মবিশ্লেষণ কতটা করতে দেওয়া হবে? পুরসভায় হারের দায় কার, সেইসব অপ্রিয় প্রশ্নের কি আজ মুখোমুখি হতে চাইবে টিম অমিতাভ? ভুল-ত্রুটি নিয়ে কি সরব হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে জেলা সভাপতি, বিধায়ক, সাংসদ ও জেলা পর্যবেক্ষকদের? যেটা হয়েছিল গত একুশের বিধানসভা নির্বাচন (WB Assembly Election 2021) এবং তারপর একাধিক উপনির্বাচনের পর। ব্যর্থতার কারণ নিয়ে দলীয় বৈঠকে অপ্রিয় প্রশ্ন কেউ তুললেই তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজকের বৈঠকেও কি বিক্ষুব্ধ শিবিরকে আদৌ বলতে দেওয়া হবে? আজ দুপুর দুটো থেকে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে শুরু হবে বিজেপির চিন্তন বৈঠক। রাজ্য পদাধিকারীদের পাশাপাশি দলের বিধায়ক-সাংসদ, জেলা সভাপতি ও জোন ইনচার্জদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মধ্যাহ্নভোজের পর শুরু হবে বৈঠক। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, মূলত সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। জয়ী প্রার্থীরাও থাকবেন। বর্ধিত রাজ্য কমিটির তালিকা দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে বলেও সুকান্ত জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.