রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ‘স্থান’ বিতর্কের মধ্যেই সোমবার বৈদিক ভিলেজে (Vedic Village) শুরু হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির (BJP) তিনদিনের প্রশিক্ষণ শিবির। প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে রাজ্য বিজেপির এই ‘প্রশিক্ষণ শিবির’ পূর্ব ভারতের অন্যতম বিলাসবহুল রিসর্ট বৈদিক ভিলেজে হওয়া নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ তুঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর ‘গরিব দূরীকরণ কর্মসূচি’ বাংলার গ্রামে গ্রামে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই ‘সেভেন স্টার’ শিবিরকে রাজ্যের আদি বিজেপি নেতারা ইতিমধ্যেই ‘বড় লোকের পিকনিক’ বলে কটাক্ষ করেছে। দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্য কমিটির একাধিক নেতাকে ডাকা হয়নি শিবিরে। যা নিয়ে তুমুল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে দলের মধ্যে।
এনিয়ে সোমবার সকালে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘চিন্তন শিবির নয়, প্রশিক্ষণ শিবির ভারতীয় জনতা পার্টির প্রশিক্ষণ সারা বছর চলতে থাকে। সারা দেশ জুড়ে চলতে থাকে এটা একটা প্রক্রিয়া। কার্যকর্তাদের বিচারধারা আদর্শবাদ সম্বন্ধে কার্য পদ্ধতির সম্বন্ধে সম্মুখ জ্ঞান দেওয়া সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মাননীয় মোদিজির নেতৃত্বে সরকার যে কাজ করছে, তার বিভিন্ন সাফল্যের বিষয় তুলে ধরা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে।’’
বিগত হলদিয়ার প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিলেন, বর্তমানে রাজ্য কমিটিতে আছেন, এরকম দশজনকে ডাকা হয়নি। তবে আজ থেকে শুরু হওয়া এই রিসর্টে এ রাজ্যে দলের সাংসদ ও বিধায়করা প্রত্যেকে আমন্ত্রিত। সব মিলিয়ে দুশোরও বেশি প্রতিনিধি থাকবেন। আর বঙ্গ বিজেপির এই প্রশিক্ষণ শিবিরের পাঠশালায় শিক্ষা দিতে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ, দলের এ রাজ্যের নয়া পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল ও সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য (Amit Malvya)। আসতে পারেন আরও কয়েকজন সর্বভারতীয় নেতা। প্রশিক্ষণ শিবিরের নামে রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজের প্রায় দেড়শো কটেজ ও সুইট বুক করেছে রাজ্য বিজেপি।
তবে দলীয় নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শিবিরে অংশগ্রহণকারী নেতারাই থাকবেন। নিরাপত্তা রক্ষী ও আপ্তসহায়করা বৈদিক ভিলেজে থাকতে পারবেন না। মনে করা হচ্ছে, সুইমিং পুল, স্পা-সহ এই বিলাসবহুল রিসর্টে বিলাসিতার যাবতীয় উপকরণ রয়েছে। ফলে বিতর্কের ভয়েই সতর্ক রাজ্য বিজেপি ঠিক করেছে, শিক্ষার্থী ছাড়া নেতাদের ঘনিষ্ঠ ও নিরাপত্তারক্ষী, আপ্তসহায়কদের রিসর্টে রাখা হবে না। তবে এই সতর্কতা সত্ত্বেও বিতর্ক কতটা এড়ানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ৫০০ টাকা প্রতিনিধি ফি ধার্য করা হয়েছে। একুশের বিধানসভা ভোটে দলের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তারপর থেকে রাজ্য বিজেপির অন্দরে মুষল পর্ব শুরু হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জেরবার দল। নিচুতলার সংগঠন ভেঙে পড়েছে। একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে দলে। সম্প্রতি একের পর এক নির্বাচনে শুধু হারের মুখ দেখতে হচ্ছে। সামনের বছর পঞ্চায়েত ভোট। চব্বিশে লোকসভা। তার আগে বঙ্গ বিজেপির সংগঠনকে মজবুত করতে চাইছে কেন্দ্রীয় নেতারা।
এই পরিস্থিতিতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলা গেরুয়া শিবিরের এই প্রশিক্ষণ শিবির রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম এইধরনের প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে। রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও দলের ইতিহাস ও আদর্শের পাঠ দেওয়া হবে। কারণ, নতুন যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন নেতৃত্বে অনেকেই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দলের আদর্শ ও ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। মতবিরোধ মিটিয়ে বুথস্তর পর্যন্ত সংগঠন মজবুত করার বার্তাও দিতে পারেন শীর্ষ নেতারা। সাংগঠনিক বিষয়েও পাঠ দেওয়া হবে। দলের আদি নেতাদের প্রশ্ন, গরিব মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য যে প্রশিক্ষণ শিবির হবে। মোদির প্রকল্পের প্রচার কীভাবে হবে তার পাঠ দেওয়া হবে। সেখানে দু’কোটি টাকা খরচ করে এত বিলাসিতা করা আদৌ কি যুক্তিযুক্ত? বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে গিয়ে নিজেরা যদি বৈভবের সমুদ্রে গা ভাসিয়ে দেন তা হলে জনমানসে বিজেপি নিয়ে ভুল বার্তা যাবে।
এমনিতেই বিজেপিকে বাংলার মানুষ বড় লোকেদের পার্টি বলে মনে করে, তার উপর এমন ‘সেভেন স্টার’ রিসর্টে স্ফূর্তিতে ডুব দিয়ে চিন্তন বৈঠক করা হচ্ছে, আগামী লোকসভা ভোটে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে দলের বিক্ষুব্ধ অংশ। স্বভাবতই, যখন রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির ইস্যু নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা, তখন তিনদিনের এই বিলাস-বৈভবে ভরা পিকনিক যে নতুন বিতর্কের সূচনা করবে তা মেনে নিয়েছেন আদি বিজেপি নেতারাও। দলের মধ্যে এই ক্ষোভ আর অস্বস্তি নিয়েই আজ শুরু হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.