গৌতম ব্রহ্ম: চামড়া সতেজ রাখার ‘ট্যাক্সিডার্মি’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই মায়ের মৃতদেহ ‘বাঁচিয়ে’ রেখেছিলেন ‘লেদার টেকনোলজিস্ট’ ছেলে। ফিমোরাল ধমনী দিয়ে ফরমালিন প্রবেশ করিয়ে ফিমোরাল শিরা দিয়ে বের করে আনা। এভাবেই মেডিক্যাল কলেজগুলি ‘এমব্লেমিং’ করে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন। ছেলে শুভব্রত এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেই মা বীণা মজুমদারের দেহকে সতেজ রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এমনই অনুমান অ্যানাটমি বিশেষজ্ঞদের।
[নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ১৩ হাজার বাঙ্কার নির্মাণ করতে চলেছে ভারত]
তবে ফারাক অবশ্য রয়েছে। পড়াশোনার স্বার্থে মেডিক্যাল কলেজ মৃতদেহের কোনও অংশ শরীর থেকে বের করে না। সবটাই ভিতরে থাকে। ডিপ ফ্রিজে মাইনাস ৬ ডিগ্রি বা তারও কম তাপমাত্রায় মৃতদেহ অবিকৃত থাকে। চামড়াটা অবশ্য ফ্যাকাশে হয়ে যায়। ফলে আঙুলের ছাপে পরিবর্তন হবেই। এক্ষেত্রে মায়ের টিপ ছাপ কীভাবে নিতেন ছেলে সেটা জানাটা জরুরি। মত বিশেষজ্ঞদের। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার তথা অ্যানাটমি বিশেষজ্ঞ ডা. পীতবরণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, নাভির উপর নুনের পোটলা রাখলে মরদেহ ২৪-৪৮ ঘণ্টা সতেজ থাকে। বহু বছর আগে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হত। আসলে মৃত্যুর পর সবার আগে পচন ধরে মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে। ক্ষুদ্রান্ত্রই মানবদেহের প্রধান ‘সোর্স অফ ইনফেকশন’। নাভিতে নুন দিলে পচনের গতি কমে যায়। তবে এখন ‘এমব্লেমিং’ করেই দেহ সংরক্ষণ করা হয়।
শুভব্রত লেদার টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সিলেবাসের মধ্যেই রয়েছে ‘ট্যাক্সিডার্মি’। জানা গিয়েছে, পশু-পাখির মমি বানাতে এই বিদ্যে জরুরি। এটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ‘এমব্লেমিং’। এটি করতে চার রকমের তরলের একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়। ফরমালডিহাইড ৩৫ শতাংশ, মিথানল ৯ শতাংশ। বাকিটা গ্লুট্যারালডিহাইড ও হিউম্যাকট্যান্স। এই তরলের জাদুতে মৃতদেহকে এতটাই সতেজ রাখা যায় যে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না। মনে হবে, যেন কোনও জীবিত মানুষ ঘুমিয়ে আছে। এক শ্রেণির বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যাঁরা জীবিত মানুষের ফোটোগ্রাফ দেখে হুবহু তেমন করেই মৃত মানুষকে বছরের পর বছর সাজিয়ে রাখতে পারেন। এই বিশেষজ্ঞদের ‘ডেমি সার্জন’ বলা হয়। অপঘাতে কেউ মারা গেলে বা
মৃতদেহের মধ্যে বিকৃতি এলে এই ডেমি সার্জনদের সাহায্য নেওয়া হয়।
মৃতদেহ সংরক্ষণের আরও অনেক পদ্ধতি রয়েছে। ব্রিটিশ নেভি অফিসার লর্ড নেলসনের দেহ দু’মাস কর্পূর মেশানো মদে চুবিয়ে সতেজ রাখা হয়েছিল। পদ্ধতির পাশাপাশি রয়েছে দেহ সংরক্ষণের হরেক রাসায়নিকও। যার বেশ কয়েকটি ‘লেদার ট্রিটমেন্ট’-এ ব্যবহার করা হয়।
[একজোট হয়ে প্রতিরোধের বার্তা বিমানের, কমিশনের সামনে ধরনায় বামেরা]
শব ব্যবচ্ছেদ চলাকালীনই মেডিক্যাল কলেজগুলি বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে রেকটাম পর্যন্ত ফরমালিনে ডুবিয়ে জারে সংরক্ষণ করে। শুভব্রতও সেই পথেই হেঁটেছেন বলে মনে করছেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট অ্যানাটমি বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম প্রধান। শুভব্রত মায়ের শরীরের ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র আলাদা জারে পুরে ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলেন। বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে কিডনি, লিভারও মায়ের শরীর থেকে বের করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই শুভব্রতর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন সুস্থ মানুষ মায়ের শরীর থেকে কীভাবে এতগুলি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বের করলেন? কীভাবেই-বা ২০১৫ সাল থেকে একটি ডেড বডি বাড়ির ফ্রিজে ভরে জীবনযাপন করলেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.