অর্ণব আইচ: দোল আর হোলি মানেই নেশা। বসন্ত নেশা নিয়ে আসে। নেশায় মেতে ওঠে ফাগুন। নেশা জাগে শিমুল আর পলাশের রঙে। আবিরের রং আর মন মাতানো গন্ধ জাগায় নেশা। রং দেওয়ার এই দিনটায় নেশা তৈরি করে ভাঙ। নেশা তৈরি করে মদ। দোলের দিন সকালে একটু পান করলে মন্দ কী? তাই দোলের দিন বটেই, তার আগের বিকেল বা সন্ধ্যা থেকেই মদের চাহিদা বাড়ে শহরে। কিন্তু গোয়েন্দাদের কাছে খবর, তাতেই তৈরি হয় যত সমস্যা। এই সুযোগ নিয়ে শহরে উঠেপড়ে লেগেছে জাল মদের কারবারিরা। তার সঙ্গে বেআইনি মদ, এমনকী, চোলাই কারবারিরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবগারি দপ্তর ও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারাও। তাই আজ থেকেই শহরের অন্তত দশটি পয়েন্টে চলছে আবগারি ও পুলিশের বিশেষ নজরদারি। দোলের দিন জাল মদ বা চোলাই খেয়ে যাতে কেউ অসুস্থ না হয়ে পড়েন, সেই বিষয়টির উপর নজর রাখছেন গোয়েন্দারা।
[সাবধান! দোলে কুকুরের গায়ে রং দিলে ৬ মাসের জেল]
একই সঙ্গে আবগারি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত বারোটার পর থেকে যাতে শহরের কোনও পানশালা খোলা না থাকে, সেই বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই বছর দোলের আগের রাতে যাতে গভীর রাত বা অতিরিক্ত সময়ের জন্য পানশালা খোলা থাকে, সেই বিষয়ে কিছু আবেদনও জমা পড়ে। কিন্তু আবগারি কর্তাদের কড়া নির্দেশ, শহরের পাঁচতারা হোটেল ও কিছু ক্লাব রাত বারোটার পর পর্যন্ত পানশালা খোলা রাখতে পারে মাত্র। কিন্তু সাধারণ পানশালা নয়। তাই কোনও পানশালাকেই সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই রাত বারোটা বাজতেই বন্ধ করতে হবে শহরের পানশালা।
কোনও পানশালা এই নির্দেশ লঙ্ঘন করছে কি না, তা দেখার জন্য আবগারি গোয়েন্দাদের একাধিক টিম নজরদারি চালাবে পানশালাগুলির উপর। কেউ এই নিয়ম না মানলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। আবগারি ও পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দোল ও হোলির দিন সকাল থেকেই শহরের বিশেষ কিছু জায়গার উপর চলবে নজরদারি। তার জন্য শহরের অন্তত দশটি পয়েন্ট বেছে নেওয়া হয়েছে। গার্ডেনরিচ, পশ্চিম বন্দর, খিদিরপুর, তপসিয়া, পার্ক সার্কাস রেল স্টেশন, বালিগঞ্জ স্টেশন, মানিকতলা, উল্টোডাঙা, টালিগঞ্জ, বড়তলা-সহ শহরের অন্তত দশটি জায়গার উপর বিশেষ নজরদারি থাকছে গোয়েন্দাদের।
[জোট নিয়ে নয়া কৌশল কংগ্রেসের, ‘শক্তিহীন’ পাঁচটি আসন ছাড়া হল বামেদের জন্য ]
তাঁদের কাছে আসা খবর অনুযায়ী, এই জায়গাগুলিতে থাকা কয়েকটি ঝুপড়িতে লুকিয়ে বিক্রি হতে পারে বেআইনি মদ বা চোলাই। এ ছাড়াও হোলির আগে থেকেই শহরে জাল বিছিয়েছে জাল মদের কারবারিরা। কলকাতার বাইরে গোপনে তৈরি হয় এই জাল মদ। কখনও বেশি দামের হুইস্কির ছিপিতে ইঞ্জেকশনের সুচ দিয়ে ফুটো করে টেনে নেওয়া হয় বেশ কিছুটা মদ। সেই জায়গায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় কম দামের মদ। এভাবে দামি মদ জোগাড় করে তা ব্ল্যাকে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। আবার কলকাতার বাইরে জাল মদের কারখানাও রয়েছে। সেখানে ইথাইল অ্যালকোহল বা নিম্নমানের মদের সঙ্গে গন্ধ ও রং মিশিয়ে তৈরি করা হয় জাল ‘ব্র্যান্ডেড হুইস্কি’। বিশেষ কয়েকটি ব্র্যান্ডের হুইস্কির লেবেল ছাপানো হয়। বোতলে সেই লেবেল সাঁটিয়ে পোরা হয় জাল মদ। এর পর সেই বোতল সিল করে চোরাপথে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়।
[বিরল অসুখে শুকিয়ে যাচ্ছে নার্ভ, হাসপাতালে জীবনযুদ্ধ শিশুর]
যেহেতু দোল বা হোলির দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মদের চাহিদা থাকে ও সেদিন মদের দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে, তাই জাল মদের কারবারিরা চড়া দামে এই জাল মদই বিক্রি করতে পারে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। তাই এই জাল মদ রুখতেও চলছে আবগারি গোয়েন্দা ও পুলিশের নজরদারি। এদিকে, দোলের দিন গাঁজা বা চরসের মতো মাদকের চাহিদাও বাড়ে। আবার এক্সট্যাসি বা এমডিএমএ-র মতো বিদেশি মারাত্মক মাদক যাতে হোলি উপলক্ষে রেভ পার্টিতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে, সেই বিষয়েও নজরদারি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.