সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: বেহালার শুভব্রত কাণ্ডে রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে। মৃত্যুর ৩ বছর পরেও বীণা মজুমদারের লাইফ সার্টিফিকেট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিউ আলিপুর শাখায় জমা দিয়েছিলেন শুভব্রত। সত্যতা যাচাই না করেই সেই সার্টিফিকেট আবার খাদ্য সরবরাহ নিগম বা এফসিআইয়ে জমা দিয়েছিলেন ব্যাংকের পদস্থ কর্তা ডিপি গুহ। কিন্তু, কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, ওই ব্যাংক কর্তাকে বেহালা থানায় ডেকে ডেরা করতে চান তাঁরা। চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী ডি পি গুহকে নোটিশ পাঠানো হতে পারে।
[শুভব্রত মানসিক ভারসাম্যহীন না সেয়ানা? মায়ের পেনশন হাতানোর ছকে তাজ্জব গোয়েন্দারা]
২০১৫ সালে মারা যান বেহালার ঘোলসাপুরের যুবক শুভব্রত মজুমদারের মা বীণাদেবী। এফসিআইয়ে চাকরি করতেন তিনি। মায়ের দেহ বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখাই শুধু নয়, গত তিন বছর ধরে নিয়মিত তাঁর পেনশনের টাকাও তুলেছেন শুভব্রত। তদন্তে জানা গিয়েছে, নিউ আলিপুর যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় বীণাদেবীর পেনশনের টাকা আসত, সেই ব্যাংকে গত বছরের নভেম্বরে মায়ের লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন তিনি। সার্টিফিকেটে স্পষ্ট বলা ছিল, বীণা মজুমদার বেঁচে আছেন। এমনকী, লাইফ সার্টিফিকেটে তাঁর স্বাক্ষরও ছিল। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত নথি তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশের দাবি, মৃত বীণাদেবীর লাইফ সার্টিফিকেটটি গ্রহণ করেছিলেন ওই শাখার কর্মী ডি পি গুহ। ওই জাল সার্টিফিকেটটি খাদ্য সরবরাহ নিগমে জমাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, নিয়ম মেনে বীণা মজুমদার সত্যিই বেঁচে আছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হয়নি। সেই সুযোগেই শুভব্রত তাঁর মায়ের স্বাক্ষর জাল করেন বলে অভিযোগ। স্বাক্ষরটি পরীক্ষা করবেন বিশেষজ্ঞরা।
[মিসড কলে বন্ধুত্ব পাতিয়ে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে উধাও, ধৃত বাংলাদেশি যুবক]
গ্রেপ্তারি পরের দিনই এসএসকেএম-এ শুভব্রতর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক রোগে ভুগছেন বেহালার ওই যুবক। তিনি পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভরতি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, শুভব্রত যদি মানসিক ভারসাম্যহীনই হন, তাহলে কীভাবে মৃত মায়ের পেনশনের টাকা তোলার ছষ কষলেন? পাভলভ মানসিক হাসপাতালে গিয়ে শুভব্রতকে ফের জেরা করবেন তদন্তকারীরা। আর এই পেনশনের টাকা যেহেতু নিউ আলিপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে তোলা হত। তাই ব্যাংকের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। সূত্রের খবর, রহস্যের জট খুলতে রীতিমতো প্রশ্নমালা সাজিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি চেয়ে পাঠিয়েছেন বেহালার থানার পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু, এখনও সব নথি জমা পড়েনি। তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তো নোটিশ পাঠানো হবেই, জেরা করা হবে ব্যাংকের ম্যানেজার ও সার্ভিস ম্যানেজার ডি পি গুহকেও। কারণ শুভব্রতর মায়ের জাল লাইফ সার্টিফিকেটটি তিনিই গ্রহণ করেছিলেন। তাঁকে বেহালা থানায় আসার জন্য নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
[শৌচাগারের জলে ভাসছে পুলিশ সুপারের দপ্তর, রেলের স্বচ্ছতায় উঠল প্রশ্ন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.