কলহার মুখোপাধ্যায়: অ্যাপেই চুরি। টাকা হাতানোর নয়া অ্যাপ। ভারচুয়ালি আপনার মোবাইলের দখল নিচ্ছে ব্যাংক জালিয়াতরা। ধারাবাহিক কয়েকটি ঘটনার পর বিষয়টি অবশ্য নজরে এসেছে পুলিশের। সেইমতো শুরু হয়েছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
একটি অনলাইন সংস্থার নাম ব্যবহার করে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শহরে এরকম ঘটনা হামেশাই ঘটে বলে প্রথমে আলাদাভাবে কেউ বিষয়টাকে আমল দেননি। তবে তদন্ত শুরুর পর ঘটনাটির গভীরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের গোয়েন্দাদের।
যাঁরা অনলাইন ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত তাঁদের কাছে ‘ওটিপি’ বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড শব্দটি নতুন নয়। যাঁরা ব্যাংক জালিয়াতির খপ্পরে পড়েছেন তাঁরা তো শব্দটিকে বিলক্ষণ চেনেন। ভুলবশত ওটিপি নম্বরটি দেওয়ার পর অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতরা – এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।
তবে এক্ষেত্রে ঘটনার তাৎপর্য একেবারে ভিন্ন। কারণ দেড় লক্ষ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য কোনও ওটিপি চাওয়াই হয়নি। তবু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও মোটা অঙ্কের টাকা। কীভাবে? বিধাননগরের পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এরকম একটি ঘটনা সম্প্রতি তাঁদের নজরে এসেছে। তদন্তের কারণে মামলার কথা এখনই খোলসা করা যাবে না। তবে জালিয়াতির এই নয়া ফাঁদ সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে একটি অ্যাপ ব্যবহার করছে জালিয়াতরা। অ্যাপটি ইনস্টল করলে একটি নির্দিষ্ট নম্বর জেনারেট করবে। সেই নম্বরটি কেউ জেনে নিলে অন্য মোবাইলটির দখল নিয়ে নিতে পারবে জালিয়াত।
অ্যাপটির নাম ‘এনি ডেস্ক’। এর কাজ অনেকটা ‘টিম ভিউয়ার’ সফটওয়্যারটির মতো। সাধারণত অফিসের কাজে টিম ভিউয়ার–এর মাধ্যমে ডেস্কটপ শেয়ারিং করা হয়। আর এনি ডেস্ক দিয়ে মোবাইল শেয়ারিংয়ের কাজ করা যায়। দূরে বসে একত্রে কাজ করতে গেলে এনি ডেস্ক–এর সাহায্য নেন একাধিক টিম মেম্বার। অ্যাপটির এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতরা সেটিকে প্রতারণার অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে। কী করছে তারা? কোনও অনলাইন সংস্থার নাম ব্যবহার করে টাকা ফেরত দিতে চেয়ে ফোন করছে জালিয়াতরা। সহজে ফেরত পেতে এনি ডেস্ক অ্যাপটি ইনস্টল করতে বলছে। ইনস্টল করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মোবাইলে একটি নম্বর জেনারেট করছে। সেটি জানতে চাইছে জালিয়াত। বিষয়টি আপনার কাছে একেবারে নতুন। তবে তলিয়ে দেখলে, এটি এটিএম কার্ডের পিন চাওয়া বা ওটিপি জানতে চাওয়ার মতোই। কিন্তু ‘এনি ডেস্ক’ – এই নতুন অ্যাপটি নিয়ে আপনার প্রাথমিকভাবে কোনও সন্দেহ না হওয়ায় আপনি নম্বরটি জানিয়ে দিলেন। নম্বরটি তার গোচরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ব্যবহার করে আপনার মোবাইলটির সম্পূর্ণ দখল নিয়ে নিচ্ছে প্রতারক। বিষয়টি ঘটছে আপনার অজান্তে। এমনকী আপনার মোবাইলেও এই সংক্রান্ত কোনও ইঙ্গিতও আপনি দেখতে পাচ্ছেন না।
এটা প্রথম ধাপ। এভাবেই এখন আপানার মোবাইলের দখল জালিয়াতের হাতে। পুলিশের অনুমান, জালিয়াত নিজেই পেটিএম বা এই ধরনের কোনও অ্যাপ, যা থেকে টাকা পয়সা লেনদেন করা যায়, সেটি ইনস্টল করে নিচ্ছে। সে নিজেই ‘এম পিন’ জেনারেট করছে। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ইচ্ছেমতো টাকা তুলছে। নিজেই পিন ব্যবহার করছে। আপনি তখনও অন্ধকারে। বিষয়টি আপনি জানতে পারবেন তখনই, যখন আপনার অ্যাকাউন্টটি জালিয়াতের খপ্পরে চলে গিয়েছে। কলকাতায় জালিয়াতির নয়া ট্রেন্ড এখন এনি ডেস্ক।
এনিয়ে জনগণকে সাবধান করতে পুলিশ জানিয়েছে, কোনও সংস্থার নাম নিয়ে ফোন করে কোনও লিংক পাঠালে তা কোনভাবেই ডাউনলোড করবেন না। রেজিস্ট্রিকৃত সংস্থা লিংক পাঠিয়ে কোনও অ্যাপ ইনস্টল করতে বলে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.