ফাইল ছবি।
অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ডে ভয়ংকর সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে যেভাবে প্রাণ দিতে হল তাঁকে, তার নৃশংসতায় শিউরে উঠছে সকলে। এ যেন হলিউড- বলিউডের থ্রিলার সিনেমাকেও হার মানায়! খুনের ঘটনায় ধৃত কসাই জিহাদকে লাগাতার জেরা করে যেসব বিস্ফোরক তথ্য জানতে পারছেন তদন্তকারীরা, তাতে দুঁদে অফিসারদেরও মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। পুলিশের দাবি, জেরায় সে জানিয়েছে, আনোয়ারুলের দেহ ৮০ টুকরো করে নিউটাউন, ভাঙড় এলাকার নানা জায়গার জলাশয়ে লোপাট করা হয়েছে। তার বিনিময়ে ৫০০০ টাকা পেয়েছে সে। আর তার এই স্বীকারোক্তির পর তদন্তকারীদের একাংশের মত, সেসব খণ্ডাংশ উদ্ধার করা আরও কঠিন হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই তা কোনও না কোনও জলচর প্রাণীর পেটে চলে গিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান।
গত ১২ মে কলকাতায় (Kolkata) চিকিৎসা করাতে আসেন ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম। ১৩ তারিখ রাতে তিনি নিউটাউনের ফ্ল্যাটে খুন হন। দিন দুই নিখোঁজ থাকার পর তাঁর হত্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এই ঘটনার তদন্তভার যায় সিআইডির (CID) হাতে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ থেকে তিনজন গ্রেপ্তার হয়। অন্যদিকে, বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার হয় জিহাদ ও সিয়াম নামে দুই ব্যক্তি। এদের মধ্যে জিহাদ কসাই। বাংলাদেশের (Bangladesh) বাসিন্দা হলেও মুম্বইতে সে কাজ করত। জেরায় জানা যায়, সাংসদকে খুনের জন্য তাদের সুপারি দেওয়া হয়েছিল। তাই মুম্বই থেকে কলকাতায় এসে কাজ শেষের পর বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ পালানোর ছক ছিল। তার মাঝেই ধরা পড়েছে। খুনের পর সাংসদের দেহ টুকরো (Cut into pieces) করে ভাঙড়ে এলাকার জলাশয়ে ফেলা হয়েছে। সেইমতো বৃহস্পতিবার রাত থেকে লাগাতার জলাশয় তল্লাশি চালিয়েও একটি অংশও এখনও উদ্ধার হয়নি।
শুক্রবার ধৃতদের জেরা করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এল পুলিশের। জানা গিয়েছে, ৫০০০ টাক দেওয়া হয়েছিল জিহাদকে। খুনের পর আনোয়ারুলের দেহ ৮০ টুকরো করা হয়। মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। হাড়, মাংস পৃথক করে হলুদ মাখিয়ে একেকটি টুকরো একেক জায়গার জলাশয়ে ফেলা হয়েছে। যদিও কোথায় কী ফেলা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও মুখে কুলুপ ধৃতদের। তবে পুলিশের অনুমান, দেহাংশ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তদন্তে আরও জানা যাচ্ছে, ২০০ কোটি টাকার বখরা নিয়ে সাংসদ আনোয়ারুলের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড শাহিনের মূল ঝামেলা। আগেও একাধিকবার সাংসদকে খুনের হুমকি দিয়েছিল শাহিন। প্রথমে ঢাকার গুলশানে এবং পরে কলকাতার নিউমার্কেটে বসে হত্যার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়। এক্ষেত্রে শাহিনের তুরুপের তাস ছিল বান্ধবী শিলাস্তি। শেষমেশ কলকাতায় আসা আনোয়ারুলকে শিলাস্তির ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে এনে খুন করা হয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ দেখে এমনই অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.