অভিরূপ দাস: শাস্তি নয়। নয় জরিমানা। তার বদলে অন্যায়ের প্রতিকার হিসেবে এমন কিছু করতে হবে যাতে সমাজের ভাল হয়, মানুষের ভাল হয়। এমনই বিধান দিয়ে মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে (Medica Superspecialty Hospital) শিক্ষা দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন। করোনা (CoronaVirus) কালে অতিরিক্ত ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ নেওয়ায় জরিমানার বদলে পার্ক সার্কাসের অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ডিম খাওয়াতে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে হাসপাতালকে।
ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানের বাসিন্দা অমিতাভ চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তিতে এই নিদান দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন (Health Commission)। স্ত্রীকে নিয়ে মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের OPD’তে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন অমিতাভ বাবু। সেখানে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসেবে ২৫০ টাকা করে মোট ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ জানান অমিতাভ বাবু। জানান, কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী মাথাপিছু ৫০ টাকার বেশি ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসেবে নেওয়া যায় না। আর যদি ডাক্তার PPE কিট পরে থাকেন তাহলে তাঁর জন্য ৫০ টাকা দিতে হয়। সেই হিসেবে অমিতাভবাবু, তাঁর স্ত্রী এবং চিকিৎসকের ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ মিলিয়ে মোট ১৫০ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৫০টাকা চার্জ তাঁকে দিতেই হবে।
এই ঘটনার জেরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়। হাসাপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিস্টেমের কন্ট্রোল পালটানো হয়নি। সেই কারণেই পুরনো চার্জ রয়ে গিয়েছে। এই যুক্তিতে চমকে ওঠেন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান তথা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ডা. অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । তাহলে কি সিস্টেমের দোহাই দিয়ে এখনও পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা মানুষের থেকে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এরপরই মেডিকাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশিকা দেওয়ার পর থেকে যাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ নেওয়া হয়েছে, প্রত্যেকের ঠিকানা খুঁজে যেন অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হয়। পাশাপাশি পার্ক সার্কাসে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ১০ লক্ষ টাকার ডিম খাওয়াতে হবে। এর জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে থাকবেন লেডি ব্রাবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার, স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্যা ডা. মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বর্ণালি ঘোষ। চাইলে লেডি ব্রাবোর্ন কলেজের ছাত্রীরাও এই উদ্যোগে অংশ নিতে পারেন। ক্যাম্প করে এই ডিম বিলি করা হবে। এর জন্য কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) কমিশনার অনুজ শর্মাকেও চিঠি লেখা হয়েছে।
ডিম বাবদ ১০ লক্ষ টাকা শিউলি সরকারকে দেবে মেডিকা কর্তৃপক্ষ। তাঁর নেতৃত্বেই পুরো বিষয়টি পরিচালিত হবে। এতে অন্তত ছ’মাস ধরে শিশুদের ডিম সরবরাহ করা যাবে বলে অনুমান কমিশনের। কোভিড (COVID-19) সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশিকা না মানলে কী হতে পারে, তার নজির সৃষ্টি করবে এই নিদান। এমনটাই মনে করছেন ডা. অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। মেডিকা চেয়ারম্যান অলোক রায়ের বক্তব্য, “ভালো কাজের জন্য টাকা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। দুঃস্থ শিশুদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে পারছি এতেই আমরা খুশি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.